দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় সরকার কিছুই করছে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৬ এএম, ৩ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় সরকার কিছুই করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের আগের দিন আজ বুধবার দুপুরে এক দোয়া মাহফিলে তিনি এরকম অভিযোগ করেন। পুরান ঢাকার জজ কোর্টে ঢাকা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। এ সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের নানা দিক আলোচনায় তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। পরে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার তা হচ্ছে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের জন্য সহায়তা। পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, করোনা মহামারির ফলে দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে আড়াই কোটি মানুষ। আগের দরিদ্র তিন কোটি। তার মানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে, তার যে পারজিং পাওয়ার মিনিমামটা থাকতে হলে, অবশ্যই এই মানুষগুলোর কাছে টাকা পাঠাতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে। সেটা তারা (সরকার) করছে না। এখনো তারা একইভাবে তেলে মাথায় তেল দিচ্ছে অর্থাৎ যাদের ইন্ডাস্ট্রি-নিন্ডাস্ট্রি আছে তাদের আবারো প্রণোদনা দিচ্ছে, এই যে দিন আনে দিন খায় মানুষ তাদের কিছুই দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, আগামীকাল বাজেট দিতে যাচ্ছে এই সরকার। আজকে মুস্তফা কামাল সাহেব একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউতে বলেছেন, সব ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছেন। মুস্তফা কামাল সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালো বুঝেন। অর্থনীতি কতটুকু বুঝেন তার নিদর্শন আমরা খুঁজে পাইনি। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতবার যখন করোনা শুরু হলো তখনই আমরা সাথে সাথে আমাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে এসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, করোনাকালে যে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক শ্রেণি এবং আজকে আইনজীবীরা আমাকে অনেকে সিøপ দিয়েছে যে, কোর্ট বন্ধ থাকার ফলে কোনো আয় নেই। যারা আইনজীবী আছেন তারা অত্যন্ত কষ্টে আছেন। এদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেই প্রণোদনা কীসের? মানুষকে তারা বোকা বানিয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে সকলকে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সরকারের কী দরকার? ব্যাংক থেকে নেবে। এটা প্রণোদনা হলো কোত্থেকে? এটা প্রণোদনা নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে শোধ করতে হবে। প্রণোদনা তাকেই বলে সরকার দুঃসময়েই আপনাকে যে আর্থিক সাহায্যটা করছে সেটা ফেরত নেবে না। আপনি সেই প্রণোদনার টাকা কাজে লাগাবেন। আমরা প্রস্তাবনায় বলেছিলাম যে, দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাস অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। গত কয়েকদিন আগে পত্রিকায় উঠেছে গাইবান্ধার একজন কৃষক সবজি চাষ করে বলেছে যে, ভাই বিক্রি হচ্ছে না। কারণ ট্রাক যায় না, ট্রাক আসে নাÑ সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে আমাদের মেরে ফেললে ভালো হতো। তাহলে কাকে প্রণোদনা দিচ্ছে? আপনাদের লোকগুলোকে যারা লুট করছে, দেশের অর্থনীতিকে একেবারে শূন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাদেরকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বড় বড় দালান তৈরি করছেন আর বলছেন উন্নয়ন, আর মনগড়া প্রবৃদ্ধির হার দিচ্ছেন আর বলছেন যে, উন্নয়ন। উন্নয়ন সেটা নয়। উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, সে যেন ভালো খেতে পায়, বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকে সেটাকে বলে উন্নয়ন। এমন উন্নয়ন করেছেন যে, হাসপাতালে বেড নেই। একটা হাসপাতাল বানিয়েছেন কোবিডের সময়ে ওইটা রাতের মধ্যে উধাও হয়ে গেল, হাসপাতাল নেই। ব্যবসায়ীরা আবার নতুন করে নতুন কমিশন পাবে। এটা তো কমিশন এজেন্ট সরকার। এটা তো জনগণের সরকার নয়।
বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোন্দকার মো. হয়রত আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম, হোসেন আলী খান হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।