মুনিয়ার মৃত্যু : নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছে না পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৭ এএম, ২৭ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৯ এএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে এক কলেজশিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সময়ে জমা দেয়ার সম্ভাবনা কম। এর আগে ঢাকার একটি আদালত ৩০ মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমরা এখনও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাইনি। আদালতের কাছে সময় বাড়ানোর জন্য পুলিশ আবেদন করবে বলেও জানান তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তৈরি এখনও শেষ হয়নি। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার জন্য দেড় থেকে দুমাস সময় লাগতে পারে। গত ২৬ এপ্রিল সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই কলেজশিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার দুই পা বিছানার সঙ্গে লেগে ছিল এবং উভয় হাঁটু কিছুটা বাঁকা অবস্থায় ছিল।
ঘটনার পরের দিন তার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত রবিবার ওই কলেজশিক্ষার্থীর বোন বলেন, আমরা এখনও হুমকি পাচ্ছি। আমাদের পরিচিত মানুষ ও আত্মীয় স্বজনরাও আমাদেরকে বলছে মামলা নিয়ে না এগোতে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারে একজন আমাদেরকে চুপ থাকার শর্তে টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কে বা কারা তাকে টাকা নেয়ার পরিবর্তে চুপ থাকার প্রস্তাব দিয়েছে তা বলতে অপারগতা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের দুজনকেই হুমকি দিয়েছেন (অভিযোগকারী ও তার স্বামী) ব্যাংকের চাকরি থেকে চাকরিচ্যুত করে দেয়ার। তাদের প্রস্তাব মেনে না নেয়ায় তারা এখন আমাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। আমরা ভয়ে আছি।
অভিযোগকারীর স্বামী মিজানুর রহমান জানান, তারা আনভীরের বিরুদ্ধে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা গ্রুপ মামলাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। অজ্ঞাতনামাদের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে তারা পহেলা মে কুমিল্লার কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, তিনি গুলশান পুলিশকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য ফোন করলে তারা শুধু তাকে এটুকুই জানিয়েছে যে, তদন্ত চলছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমাদেরকে এটাও বলেছে যে, তদন্তের জন্য তারা কুমিল্লা আসবেন। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পুলিশ এখনও আনভীরকে গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় ওই কলেজশিক্ষার্থীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নিহতের বড় বোন বলেন, আমার বোনের সঙ্গে আনভীরের সম্পর্ক ছিল এবং তিনি তাকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২৬ এপ্রিল সকালে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানায়, আনভীর তাকে বিয়ে করবে না এবং তিনি তাকে বকাঝকা করেছেন। সে আরও জানায় যে, সে বিপদে আছে এবং যেকোনো সময় কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।