শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল ডিআরইউতে অবাঞ্ছিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৫ এএম, ২১ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ডিআরইউ নেতারা। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন না হওয়ায় শুক্রবার মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করবেন সংগঠনটির নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে সংগঠনের নিজস্ব চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী।
তিনি বলেন, রোজিনা ইসলামের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং সেখানে অবশ্যই সাংবাদিক প্রতিনিধি থাকতে হবে৷ কারণ যারা রোজিনা ইসলামকে মেরেছেন, তারা তদন্ত করবেন, সেটি হতে পারে না।
এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের জন্য অসম্মানজনক। কোনো সাংবাদিক চোর নন, তারা তথ্য সংগ্রহকারী। ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরা ডিআরইউ প্রাঙ্গণে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। ডিআরইউর কোনো অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করা হবে না। তাকে অতিথি করলে ডিআরইউতে মিলনায়তন ভাড়া দেয়া হবে না। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান ও রিয়াজ চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য শেখ মামুনুর রশীদ, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ ফয়েজ, ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ- ডিক্যাবের সভাপতি পান্থ রহমান প্রমুখ।
রোজিনার মুক্তিসহ সাংবাদিকদের চার দফা দাবি : প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। অন্য দাবিগুলো হচ্ছে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হেনস্তাকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদান এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ‘অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই ও স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটে শাস্তি চাই’ শীর্ষক এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।
মানববন্ধনে ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে আজকে যারা বেআইনিভাবে মামলা দিয়েছেন এবং গ্রেফতার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো এবং তাদের বিচারের দাবিতে আমরা আজকে সমবেত হয়েছি। রোজিনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, তিনি তথ্য বা গোপন নথি চুরি করেছিলেন। কোন তথ্যের কথা বলা হচ্ছে? তিনি তো সেখানে টাকা-পয়সা চুরি করতে যাননি, সেখানে কম্পিউটার চুরি করতে যাননি। তাদের কথা যদি আমি মেনে নিই, তাহলে তিনি তথ্য চুরি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তথ্য তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, সে তথ্য জনগণের। কর্মকর্তারা জনগণের যে তথ্য গোপন করে রেখেছিলেন সেটি নিয়ে জনগণকে উপহার দেয়ার জন্য রোজিনা গিয়েছিলেন। যখন প্রধানমন্ত্রী অবাধ তথ্য অধিকার আইন জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালে পাস করেছিলেন, তারপরে এই অফিসিশয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অবাধ তথ্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি থাকতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ওই আইনটি পাস করেছিলেন। এর আগে কোনো সরকার অবাধ তথ্য অধিকার আইন পাস করেনি।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র রোজিনার মুক্তি নয়, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো শনিবার বাস্তবসম্মত গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
ডিইউজের একাংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, আমাদের সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, রোজিনা ইসলামের এই ঘটনায় অতিরিক্ত সচিব মূল অভিযুক্ত। তিনি নিজে রোজিনাকে হেনস্তা করেছেন, তার গায়ে আঘাত করেছেন। অতিরিক্ত সচিবের তদন্ত করার জন্য যুগ্মসচিব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি একটি হাস্যকর ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, সচিবালয়ের মতো একটি জায়গায় পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে দিলেও তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন না। তাহলে একটি ঘরে কেন তাকে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হলো? সচিবালয়ে যে রিপোর্টাররা কাজ করেন তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। তারা সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সচিব এমন কোনো লাট-বাহাদুর হননি। সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের যখন যেটা লাগবে তখন সেই ফাইল, ফাইলের পাতা নিজে ছিঁড়ে দিয়ে দেন। এই ফাইলের পাতাগুলো আপনারা না দিলে কোত্থেকে আসে? এমনকি যেখানে আপনার স্বার্থ আছে সেই ফাইলের পাতা আপনি সাংবাদিকের বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসেন। আপনারাই সর্বপ্রথম অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেন এবং এর জন্য দায়ী হবেন আপনারাই। আর আপনারা অনেক বড় ফাইলের কথা বলছেন। এপিএসের রুমে আপনারা সিক্রেট ফাইল রেখে ঘোরাফেরা করেন, আপনারা তো ওই পদের উপযুক্তই নন। আপনাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার জন্য একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। তাতে সচিব বা রোজিনা, যেই অপরাধী হোক না কেন অবশ্যই শাস্তি মাথা পেতে নেব। কিন্তু তদন্ত কমিটি খুঁজতে হবে নিরপেক্ষ, স্বাধীন, প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত এবং সেখানে অবশ্যই সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আমরা বেশি কিছু চাই না। আমরা রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, মামলা প্রত্যাহার চাই হেনস্তাকারীদের শাস্তি এবং এই ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি চাই। যাতে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ থাকবে। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু প্রমুখ।
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্যাতনকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শাস্তি ও স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছে বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি উত্থাপন করেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশে, জাতীয় যুব জোট, জাতীয় নারী জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পুরো মন্ত্রণালয় দুর্নীতির সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনসহ স্বাস্থ্যখাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহের জরুরি কাজ না করে অপ্রয়োজনীয় ও ভুয়া কেনাকাটায় ব্যস্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একমাত্র কাজ দুর্নীতি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম খারাপ করা। জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি নইমুল আহসান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মো. আনোয়ারুল হক, শ্রমিক জোটের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, যুব জোটের সহ-সভাপতি কাজী সালমা সুলতানা, জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, কৃষক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান ফসি, ছাত্রলীগের (হা-ন) সভাপতি আহসান হাবিব শামীম, সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।