শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ রেখে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৬ এএম, ২৮ এপ্রিল,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১১ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দেশে করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অক্সিজেনের ব্যবহার ও সরবরাহ বন্ধ রেখে শুধু হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। দেশের পাঁচটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এক চিঠিতে শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যা সময়সাপেক্ষ। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ সম্প্রতি দ্রুত বাড়ছে। দেশের হাসপাতাল/ক্লিনিকে করোনাভাইরাসে মারাত্মক আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন হ্রাসের কারণে দ্রুত মেডিক্যাল গ্রেডের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল/ক্লিনিকে চাহিদা অনুসারে মেডিক্যাল অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানো এবং হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখা প্রয়োজন। তাই দেশে করোনা সংক্রমণ চলাকালীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন ব্যবহার বন্ধ রেখে শুধু হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হলো। দেশের পাঁচটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলোÑ লিন্ডে বাংলাদেশ, স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড, ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড, ডিআর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও মেসার্স বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড। দেশের মোট অক্সিজেন চাহিদার বড় একটি অংশ আসে ভারত থেকে। কিন্তু দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থায় অক্সিজেন রফতানি ও সরবরাহ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে এরই মধ্যে সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের যে পরিমাণ রোগী আছে তাতে অক্সিজেনের সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত সোমবার মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ রোগী আছে তাতে অক্সিজেনের সমস্যা হবে না। রোগী কমে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদাও কমে গেছে। রোগী যাতে না বাড়ে, সেভাবেই চলতে হবে। ‘রোগী বেড়ে গেলে সঙ্কট তৈরি হবে। রোগী যদি সাত হাজারের জায়গায় একুশ হাজার হয় তাহলে সঙ্কট হবে। যে কোনো দেশেই সঙ্কট হবে। আমেরিকাতে হয়েছে, ইউরোপে হয়েছে, ভারতের পরিস্থিতি তো আপনারা দেখছেনই।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে দৈনিক লিকুইড অক্সিজেনের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫০ টনের মতো। এছাড়া সরবরাহ লাইনের গ্যাস থেকে অক্সিজেন উৎপাদন হয় ২০০ টনের মতো। দেশের হাসপাতালগুলোয় দৈনিক এক শ থেকে দেড় শ টন অক্সিজেন লাগছে। ‘আমরা ভালো পজিশনে আছি। অতিরিক্ত যদি কিছু না হয় তাহলে অক্সিজেনের সমস্যা হবে না। যে অক্সিজেন অন্যান্য শিল্প-কারখানায় দিত ৪০ টন সেটাও আমরা আমাদের জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছি। কখনও যদি প্রয়োজন পড়ে আমরা সেই ৪০ টনও নিয়ে নেব। আমরা আমাদের রোগীদের জন্য ব্যবহার করব।’ করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ভারত থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ টন লিকুইড অক্সিজেন আনা হতো। ভারতে সম্প্রতি অক্সিজেনের মারাত্মক সংকট দেখা দেয়ায় সেখান থেকে আসা বন্ধ রয়েছে। তবে এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সাধারণত বাংলাদেশের ভারত থেকে অক্সিজেন আনার দরকার হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় ৪০-৫০ টন করে দৈনিক আমদানি করেছি। গত কয়েকদিন ভারত অক্সিজেন দেয়া বন্ধ করে দিলেও আমরা চলতে পারছি। আমরা গ্যাস অক্সিজেনও ব্যবহার করছি। আমরা প্ল্যান করেছি, আমাদের লোকাল লিকুইড অক্সিজেন যারা তৈরি করে তাদের সবটা আমরা নিয়ে আমাদের হাসপাতালগুলোকে দেব, যেখানে লিকুইড অক্সিজেনের প্রয়োজন আছে।’