গুলশানে ফ্ল্যাটে মুনিয়ার লাশ : বসুন্ধরার এমডি সায়েমের নামে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ এএম, ২৮ এপ্রিল,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৮ পিএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামে এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার রাতে ওই কলেজছাত্রীর উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ওই ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় ৩০৬ ধারায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া’র অভিযোগে বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে এ মামলা করেছেন। মৃত মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী ছিলেন। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান জোনের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। এখানে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।
উপকমিশনার সুদীপ কুমার জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ আলামত সংগ্রহ করেছে। মামলার বরাত দিয়ে উপকমিশনার বলেন, মেয়েটির সঙ্গে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডির সম্পর্ক দুই বছরের। এমডি এক বছর মেয়েটিকে বনানীর ফ্ল্যাটে রাখেন। পরে মনোমালিন্য হলে মেয়েটি কুমিল্লায় চলে যায়। তবে গেল মার্চ মাসে ঢাকায় এসে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেন।
উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, গুলশানের ওই বাসায় গত ২৩ এপ্রিল একটি ইফতার পার্টি হয়। ওই পার্টির ছবি ফেসবুকে আপলোড করা নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে ওই এমডির মনোমালিন্য হয়। পরে মেয়েটি তার বোনকে ফোন করে জানান, যেকোনও মুহূর্তে তার যেকোনও ঘটনা ঘটতে পারে।
এরপরই সোমবার বিকেলে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন ওই তরুণীর বোন। তবে গুলশানের ফ্ল্যাটটির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পান তিনি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শোবার ঘরে তরুণীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। সাক্ষ্যপ্রমাণ হাতে এলে ওই এমডির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান মামলাটির তদন্ত করছেন। মামলা নম্বর-২৭। এরইমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ ও মুনিয়ার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আসবে।
গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে, মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন চুক্তিপত্র অনুযায়ী ওই ফ্ল্যাটটির মাসিক ভাড়া ১ লাখ টাকা। সেখানে অগ্রিম দেয়া হয়েছে ২ লাখ টাকা। এরইমধ্যে দুই মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর মুনিয়ার বড় বোন মামলার বাদী নুসরাত জাহান বলেন, আমি নিজে বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেছি। মামলাটি একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির ছেলের বিরুদ্ধে হয়েছে। বাদী নুসরাতের বরাত দিয়ে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘মুনিয়ার সঙ্গে একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মুনিয়া সেখানে একাই থাকতেন।’
বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : রাজধানীর গুলশানে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) জাফর হোসেন বলেন, সায়েম সোবহানের দেশত্যাগে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, কারও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আদালতের অনুমতির প্রয়োজন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসন কর্তৃপক্ষকেও সায়েম সোবহান যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামে এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানকে মামলায় আসামি করা হয়। এই মামলায় পুলিশ সায়েম সোবহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে। ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে সায়েম সোবহানের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে উদ্ধার মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) নামের তরুণীর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এখন তার লাশ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মুনিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত করেন চিকিৎসকরা। পরে স্বজনরা তার লাশ নিয়ে কুমিল্লার পথে রওনা হন।
মামলার প্রতিবেদন দাখিল ৩০ মে : লাশ উদ্ধারের পর রাতেই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৭। মামলায় আসামি করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে (৪২)। পরে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ মে দিন ধার্য করেন। মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর গুলশান থানার পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুনিয়ার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো জব্দ করে।