লকডাউনে কাঁচাবাজারে ভিড়, বেগুনের সেঞ্চুরি, কাছাকাছি শসা-ঢেঁড়স-বরবটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৮ এএম, ১৭ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
চলছে রমজান মাস, সঙ্গে লকডাউন। আবার সেই সঙ্গে শুক্রবার। তাই গতকাল সকাল হতেই রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের অস্বাভাবিক আনাগোনা। বিশেষ করে কাঁচাবাজারের প্রাণখ্যাত কাওরান বাজারে দেখা গেছে বেশ ভিড়। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। আর শুক্রবার সকালে প্রচন্ড গরমে বাড়ছে অস্বস্তি। প্রচন্ড গরমের ফলে বাজারে ঘেমে অস্থির হয়ে উঠছেন ক্রেতারা। রাজধানীর সড়কগুলো ফাঁকা হলেও বাজারগুলোতে বেশ ক্রেতাসমাগম। বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চলছে কেনাকাটা। যদিও দূরত্ব মেনে কাওরানবাজার কিংবা অন্যান্য বাজারে কেনাকাটা করা কতোটা সম্ভব, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে মাস্কের ব্যবহারে অনেকটাই উদাসীন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে রয়েছে মাস্ক।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কাওরানবাজার, ফকিরাপুল, পান্থপথ, রাজাবাজার, শুক্রবাদসহ বিভিন্ন বাজারে লোকসমাগম লক্ষ্য করা যায়।
রাজধানীর বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি একশ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজি। শসা, ঢেঁড়স, বরবটির কেজি একশ টাকার কাছাকাছি। সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি ও লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মান ও বাজার ভেদে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। গত সপ্তাহে বেশিরভাগ বাজারে বেগুনের কেজি ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। খিলগাঁও তালতলা বাজারে ১২০ টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করা আফজাল হোসেন বলেন, রোজার প্রথম দিন থেকে বেগুনের দাম বেড়েছে। প্রথম রোজায় বেগুনের কেজি ৮০ টাকা বিক্রি করি। পাইকারিতে দাম বাড়ায় আজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি পিস পানিকচু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লতির আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মরিচ ৫০ টাকা, চালকুমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা আম ৬০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা। মানভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচাকলা ২০ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় পাঁচ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, সোনালী ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ২৩০ টাকা। এছাড়া হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা পিস, কবুতর ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৬ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা কেজি। অপরিবর্তিত আছে ভোজ্যতেল। পুষ্টি ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকা, রূপচাঁদা ৬৪০ টাকা, বসুন্ধরা ৬৪০ টাকা, তীর ৬৪০ টাকা, মুসকান ৬২০ টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১২০ টাকা লিটার এবং পাম ১০৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল চিকন ১০৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৭০ টাকা এবং মুগ ডাল ১৩৫ টাকা। তিনি বলেন, রোজায় বরাবরই বেগুনের চাহিদা বেশি থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই বেগুনের এমন দাম বেড়েছে। দাম বাড়লেও বাজারে বেগুনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
রামপুরা বাজারে ১০০ টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করা মো. মিলন বলেন, যেভাবে বেগুনের দাম বাড়ছে তাতে কেজি দেড়শ টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। দাম বাড়লেও এক শ্রেণির ক্রেতারা ঠিকই বেগুন কিনছেন। তিনি বলেন, কেউ কেউ বেগুনের দাম শুনেই চলে যাচ্ছে। সবকিছু ভেবে-চিন্তেই বেগুন এনেছি। বেশি আনলে বিক্রি হবে না, তাই পাঁচ কেজি এনেছি। সবজির পাশাপাশি দাম বেড়েছে শাকের। বাজার থেকে এখন শাক এক আটি কিনতে ১৫ টাকা বা তার বেশি গুনতে হচ্ছে। পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল শাক, সবুজ শাক, পাট ও কলমি শাক। পুঁই শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সবজির দাম নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে মালিবাগের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, রোজাকে হাতিয়ার করে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়ি দিয়েছে। এই মহামারির মধ্যেও ব্যবসায়ীরা এই অনৈতিক কাজ করছে। আল্লাহ এটা সহ্য করবে না। খিলগাঁও থেকে বাজার করা সাদা আলী বলেন, বাজারে কারো কোনো তদারকি নেই। এ কারণে মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়ি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত দ্রুত বাজার তদারকিতে নামা। তা না হলে কষ্টে থাকা মানুষগুলোর কষ্ট আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী জয়নাল ব্যাপারী বলেন, সবজির দাম এমনিতেই বাড়ছিল। রোজার কারণে দাম আরও বেড়েছে। সহসা সবজির দাম কমার সম্ভাবনা কম। মালিবাগে সবজি বিক্রি করা সাইফুল ইসলাম বলেন, সবাই ভাবে আমরা সবজির দাম বেশি রাখছি। আড়তে গেলেই টের পাবেন সবজির দাম কি হারে বেড়েছে। আমরা অল্প লাভেই সবজি বিক্রি করেছি। আড়তে দাম বাড়লে তো আমাদের কিছু করার নেই।