ব্রয়লারের ডাবল সেঞ্চুরি, বেড়েছে ডিম-চাল-পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৭ পিএম, ১২ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৫০ এএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, টমেটো, চাল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্যও বেড়েছে।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি ২৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ টাকা।
আল্লাহর দান চিকেন ব্রয়লার হাউজের কর্মচারী মো. উজ্জল বলেন, ‘গতকাল ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৮০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এক সপ্তাহ আগে ১৬০ টাকা ছিল। গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ব্রয়লার কিনতে আমাদের ১৯৩ টাকার বেশি পড়ে।’
ব্রয়লারের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর হাঁসের ডিমের ডজন ১৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে হাঁসের ডিমের ডজন একই টাকা থাকলেও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ছিল ১২৫ টাকা।
ডিম বিক্রেতা আনোয়ার আলী বলেন, ‘ডিমের দাম এত বেড়ে যাবে ভাবতে পারিনি। পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। তাই দাম বাড়তি।’
মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, আটাশ ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৮২ টাকা ও চিনিগুঁড়া ১২০ টাকায়।
ঢাকা রাইসের স্বত্বাধিকারী মো. সায়েম বলেন, ‘প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়েছে। চিনিগুঁড়া চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। সবকিছুর খরচ আগের তুলনায় বেশি।’
কারওয়ানবাজারে গতকাল কেজিপ্রতি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহে আগে ছিল ৮০ টাকা। কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৮০ টাকা।
পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বরবটি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, শসা ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটল, ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা। বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, মাঝারি ও ছোট আকারের ইলিশ যথাক্রমে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ টাকা ও রুই মাছ আকার অনুযায়ী ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দু-একটি ছাড়া প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে।’
কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের আল্লাহ দান স্টোরের মালিক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আটা, ময়দা, তেল, চিনিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ২-৫ টাকা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দামের বৃদ্ধির প্রভাব সব জায়গায় পড়েছে।’
কারওয়ানবাজারে মুরগির দোকানের কর্মচারী লিটন বলেন, ‘গতকাল ২০ টাকার কাঁচামরিচ কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এত অল্প টাকার মরিচ দোকানদার দেননি। না কিনেই চলে গেছি। ৬ জনের পরিবার এক কেজি চালেই দিন পার করতে হয়। ডাল, ভাত আর আলু ভর্তাই প্রতিদিনের খাবার। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে বাড়িভাড়া দিয়ে টিকে থাকাটা অনেক কঠিন।’
বেসরকারি চাকরিজীবী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তাদের আমিষের জোগান দেয় ডিম আর ব্রয়লার মুরগি। এই ২টা জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ অনেক সমস্যায় পড়বে। আমরা বাধ্য, জিম্মি। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার মতো কেউ নেই।’
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছে, মানুষের আয় কমেছে, অনেকের সঞ্চয় খরচ হয়েছে, কেউ আবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এখন আবার দাম বেড়েছে, যা সহ্যসীমার বাইরে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো জিনিসের দাম বাড়তে সরকারকে সব সময় সক্রিয়, উদ্যমী ও চাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া যায়। সরকারের মন্ত্রীরা দাম বাড়ানো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। কেউ বলে মানুষ এখনো কাপড় পরছে, কেউ বলে মানুষ এখনো না খেয়ে মরেনি। তারা ঘরে বসেই সবচেয়ে ভালো জিনিসটা পায়। অনেকে ক্ষমতাবলে আবার ফ্রিও পায়। তাদের তো আর বেতনের টাকা খরচ করে জিনিসপত্র কিনতে হয় না। তাই জিনিসপত্রের দাম কত হলো, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।’