ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন নয়, বাতিল চান ড. কামাল হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪১ এএম, ৭ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৯ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে কথা চিন্তা করছেন-গণমাধ্যমে এমন সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজ শনিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামে সভাপতি এই দাবি স্পষ্ট করেন।
তিনি বলেন, আমরা সংশোধন নয়, আইনটি বাদ দেয়ার পক্ষে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এভাবে হলে বাক স্বাধীনতা, চিন্তা করা স্বাধীনতাকে যেভাবে আঘাত দেয়া হচ্ছে সেখান থেকে আমাদের পুরোপুরি সমাজকে মুক্ত করা দরকার।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ যারা নিজেদের নির্বাচিত দাবি করে দেশ শাসন করছে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থন নেই। জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার অপকৌশল হিসেবে বিভিন্ন কালা কানুন জারি করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তারই অংশ। দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে ও দুই লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ নতজানু নীতি গ্রহণ করেছে। আজ গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের স্বর্গ রাজ্য গড়ে উঠেছে। জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। সামনে অগ্রসর হওয়া ছাড়া জনগণের আর কোনো বিকল্প নাই। এই রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক লুন্ঠনের বিরুদ্ধে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে জনগণকে ঐক্য হতে হবে। চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ‘দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত অশুভ সিন্ডিকেট’ দায়ী বলে মন্তব্য করেন কামাল হোসেন।
গণফোরাম সভাপতি জানান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি আদর্শের ভিত্তিতে গণফোরাম জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগামী রমজান মাসে সারাদেশে গণসংযোগ শুরু করবে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া পদত্যাগের পর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে কে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, এখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আওম শফিকউল্লাহ। উনি খুব পরিচিত লোক। গণফোরামের অপর একটি অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক কর্মসূচি করছে তারা কি গণফোরামে অংশ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণফোরাম থেকে কিছু লোক বেরিয়েছেন, বেরিয়ে গিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন। তারা বেরুতেই পারেন। বাধ্য করে কাউকে তো রাখা যায় না। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনারা কেনো বেরিয়ে গেছেন। আমরা যারা গণফোরাম করে যাচ্ছি আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ঐক্যের ওপর ভরসা করে মাঠে আছি এবং মানুষের মধ্যে যে ঐক্যের জন্য ঐকমত্য অনেকটা গড়ে উঠেছে। আমরা চাচ্ছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাতে তারা বাধ্য হয় যেসব অনুচিত কাজ করছে সেটা থেকে সরে দাঁড়াতে। জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণফোরামের আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। প্রায় এক বছর পর বাসার বাইরে এসে এই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করলেন ড. কামাল। সংবাদ সম্মেলনে আওম শফিকউল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, জানে আলম, সুরাইয়া বেগম ও সেলিম আকবার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ড. কামাল হোসেন যখন জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন তখন প্রেসক্লাবের বাইরে যুব গণফোরামের ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজের ব্যানারে মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদদের নেতৃত্বে একটি অংশ লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যু ও কাটুর্নিস্ট কিশোরের ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেন। এই সমাবেশ গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, লতিফুল বারী হামিমসহ যুব ফোরামের নেতা নাসির হোসেন প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।