সরকার দেশে নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে : সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, সরকার দেশে নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। কথায় কথায় মানুষ হত্যা, গুম এখন নিত্যকার ঘটনা। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের উপর পুলিশী হামলার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব বলেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং শাহজান আলম সাজু ও দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি আজাদ, ইলিয়াস হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি শাহিন হাসনাত, বাছির জামাল ও রাশিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ততোই বাড়তে শুরু করেছে। বিরোধীদের মোকাবেলায় রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে তারা এক ধরনের আত্মঘাতি পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করছে। তাই ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর বর্বর পুলিশি হামলা, গণ গ্রেপ্তার, গুলি করে হত্যা এবং সভাসমাবেশের বাঁধা প্রদান সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকার গণ আন্দোলন দমাতে হত্যার মহোৎসব শুরু করেছে। ডিসেম্বরেই এই অবৈধ সরকারের পতন হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী বলেন, এই ডিসেম্বর মাসে হানাদার পতন করেছিলাম। এই ডিসেম্বর মাসেই স্বৈরাচারী এরশাদকে পতন করেছিলাম। এই ডিসেম্বরেই পেশাজীবী পরিষদ এবং সাধারণ জনগণকে নিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বুধবার (৮ ডিসেম্বর) পুলিশ কমিশনার যেভাবে কথা বলেছে ইতিপূর্বে কোন পুলিশকে এভাবে কথা বলতে দেখিনি। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য শুনলে মনে হয় সরকারি অফিসার নয়, আওয়ামী লীগের কোনো ক্যাডার বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন,সাংবাদিক পেশাজীবীরা কেউই এই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশের বাড়াবাড়ি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে।
বর্তমানে দেশে কোন গণতন্ত্র নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেছে খেলা হবে ইতিপূর্বে কোন সরকারি দলের লোক এইভাবে খেলা হবে বলে নাই। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সেই খেলা আপনারা দেখিয়েছেন। এই খেলার জন্য এদেশের মানুষ আপনাদেরকে বিদায় করবে। পেশাজীবী এবং জনগণ একসাথে ঐক্য করে এই সরকারের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হবে। সরকারের পতন নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, এই সরকার সাংবাদিকদের শত্রু, এখন আন্দোলনের চূড়ান্ত সময় এসেছে। এই জালিম সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বুধবার বিএনপির ওপর পুলিশ যে নির্যাতন চালিয়েছে এটা কোন সভ্য দেশে হতে পারে না। সরকারকে বলবো মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিন। আমরা জানি এ সরকারের কাছে বলে লাভ নাই। সরকারের পতন ছাড়া সাংবাদিকদের মুক্তি নাই। আপনারা প্রস্তুত হন সরকারের পতনের পরই আমরা আমাদের বিজয় উদযাপন করতে পারবো।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সাংবাদিকরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়েছেন। পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনকালে যারা অসুস্থ হয়েছেন দোয়া করি তারা অচিরেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এই সরকার দাবি মানবে না, দাবি আমাদেরকে আদায় করে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল সেইভাবে রাস্তায় নামতে হবে। যারা রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের সাথে অঙ্গীকার করে আমরা রাস্তায় নামবো। রাজপথে যে রক্ত ঝরছে তার প্রতিশোধ হল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। একসাথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তবেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের ওপর হামলা করে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা করছে। গত ১৪ বছরে ৫০ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের মধ্যে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছে। এই সরকার এখন মরণ কামড় দিচ্ছে। বুধবার সংবাদকর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রক্ষা করেছে। সাংবাদিকদের উপর হাত দিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। আপনাকে নিকৃষ্ট স্বৈরাচারের পরিণতি বরণ করতে হবে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বক্সভর্তি করে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী গণধিকৃত এই সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, গুম, খুন, ক্রসফায়ার,ধর্ষণ, বিনাবিচারে হত্যা আয়নাঘর স্থাপন করে ভিন্নমতের নেতা-কর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন, জুলুম-নিপীড়নের কারণে ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা ভাবছে পুলিশ ও দলীয় অস্ত্রধারীদের লেলিয়ে দিয়ে খুন করে, জেলেপুরে, জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে এবং সভা-সমাবেশে পন্ড করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকবে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হুশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, খুন করে, রক্তঝরিয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। দেশের জনগন আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারা দুঃশাসনের অবসান চায়। তারা বাঁচার মতো বাঁচতে চায়। তারা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। তা-ই জনগন মনে করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনই হচ্ছে মুক্তির একমাত্র পথ। জনগনের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এই সমাবেশ থেকে আমরাও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। একই সঙ্গে সকল পেশাজীবিসহ দেশবাসীকে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানো আহবান জানাচ্ছি।