আজও টিকিট না পেয়ে লাইনেই রয়ে গেলেন কয়েক শত নারী-পুরুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৬ এএম, ৪ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঈদে অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন গতকাল রবিবারও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার পর টিকিট না পেয়ে আজ সোমবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েক শ নারী-পুরুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনে মোট ১০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৯টি কাউন্টার থেকে পুরুষদের টিকিট দেয়া হচ্ছে আর ১টি কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে নারীদের টিকিট।
গতকাল রবিবার সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরুর পর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে পুরুষদের এবং দুপুর ১২টার মধ্যে নারীদের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শেষ হয়। তারপরই তারা আজকের টিকিটের জন্য লাইনে অবস্থান নেন। এর আগে গত শনিবারও টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ার পরই কয়েক শ টিকিটপ্রত্যাশী লাইনে অবস্থান করেন পরদিনের টিকিটের আশায়। দেখা যায়, গত শনিবার ও গতকাল সকালে ট্রেনের টিকিটের জন্য কমলাপুর স্টেশনে লাইনে দাঁড়ান কয়েক হাজার মানুষ। দুপুর ১২টার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হলেও অনেকেই টিকিট পাননি। টিকিট না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান এবং অনেকে কালকের টিকিটের জন্য লাইনে থেকে যান। আজ থেকে যাওয়াদের মধ্যে কয়েকজনকে সময় কাটানোর জন্য তাস খেলতেও দেখা যায়। ঢাকায় পড়াশোনা করছেন পঞ্চগড়ের আরিফুর রহমান। ঈদে গ্রামে যাবেন। তিনি কমলাপুর স্টেশনে গত শুক্রবার রাতে আসেন টিকিট কাটতে। না পেয়ে গতকালও রাত কাটান স্টেশনেই। কিন্তু আজও তিনি টিকিট পাননি। কাল টিকিট পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। বেলা পৌনে ১টার দিকে দেখা যায়, নারীদের লাইনে ৩৫ জন রয়েছেন। তারা আজকের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন, ‘আজ ভোররাত ৪টায় এসেছিলাম। কিন্তু টিকিট পাইনি। এখন চলে গেলে কালকে এলে টিকিট পাব না। মাঝখান থেকে কষ্ট হবে। তাই কাল টিকিট নিয়ে একবারে যাব বলে রয়ে গেলাম।’
টিকিটের আশায় কমলাপুরে সারা রাত শতাধিক নারী : ট্রেনের টিকিটের আশায় গত শনিবার সারা রাত কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটিয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশী শতাধিক নারী। ভিড় বেশি থাকায় সারা রাত স্টেশনে কাটিয়েও টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নারীদের অনেকে। কমলাপুর রেলস্টেশনে মোট ১০টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তার মধ্যে নয়টি কাউন্টার থেকে পুরুষদের টিকিট দেয়া হচ্ছে। বাকি মাত্র একটি স্টেশন থেকে নারীদের টিকিট দেয়া হচ্ছে। নারীদের জন্য বরাদ্দ একমাত্র কাউন্টার থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের টিকিটও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও প্রতিবন্ধীরা। নারীদের মধ্যে কেউ গত শনিবার বিকেলে, কেউ সন্ধ্যায়, কেউবা এসেছেন রাতে। গতকাল থেকে লাইনে থাকা নয়জন নারীর সঙ্গে কথা হয়। তাদের একজন ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইবনাত।
তিনি বলেন, ‘গত শনিবার থেকে আমরা টিকিটের জন্য স্টেশনে অবস্থান করছি। রাত স্টেশনেই কাটিয়েছি। আমরা কয়েকজন মিলে নিজেরাই সিরিয়াল করেছি। গত মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪৪ জন নারীর সিরিয়াল করেছি। ভোররাতে বা তার পর থেকে যেসব নারী এসেছেন, তাদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। এত কষ্ট করার পরও বুঝতে পারছি না টিকিট পাব কি না।’ গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন মৌসুমি বেগম। তিনি যাবেন দিনাজপুর।
তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে লাইনে আছি, এখনো আমার সামনে অনেক মানুষ। টিকিট পাব কি না, জানি না।’ জাহানারা বেগম ঢাকার আরামবাগে একাই থাকেন। ঈদ করতে লালমনিরহাটের গ্রামের বাড়ি যাবেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার টিকিট কেটে দেয়ার কেউ নেই। তাই গতকাল রাত আটটায় এসেছি। রাত এখানেই ছিলাম। কিন্তু এখন টিকিট পাইনি।’ নারীরা জানান, রেলস্টেশনে রাত পার করলেও নিরাপত্তার কোনো সংকট ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বৈদ্যুতিক পাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রচন্ড গরমে তারা ঘামছিলেন। তাদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়।
গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, নারীদের জন্য দুটি কাউন্টারের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখবেন। কিন্তু দেখা গেল, নারীদের জন্য কাউন্টার তো বাড়েইনি, বরং যে একটি কাউন্টার আছে, সেখানে আজ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের লম্বা লাইন। নারীদের কাউন্টারের সামনে অন্তত ২৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে দেখা যায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। চারজন নারীর পর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে টিকিট দেয়ায় দেড় ঘন্টায় মাত্র চারজন শারীরিক প্রতিবন্ধী টিকিট কাটতে পেরেছেন বলে দাবি করেন তাদের একজন বশির আহমেদ।
তিনি বলেন, অন্তত ঈদের সময় প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার দেয়া উচিত। বশির আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাছাড়া নারীদের তুলনায় প্রতিবন্ধীরা দুর্বল। প্রতিবন্ধীদের আগেই নারীরা টিকিট নিয়ে নিচ্ছে।’ কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সোমবার আলাদা কাউন্টার করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে নারীদের জন্য কাউন্টার বাড়ানোর সুযোগ নেই।