দিনের শুরুতে যেমন যানজট, শেষেও একই ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৮ এএম, ১২ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানীতে এতো এতো উন্নয়ন কাজ হচ্ছে কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। মূলত এদিকে সংশ্লিষ্টদের কেউ নজরই দিচ্ছে না। প্রতিদিন সকালে অফিস যেতে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তা রীতিমতো যুদ্ধ জয় করার মতো। একে তো গণপরিবহন সংকট, তার ওপর ২০ মিনিটের পথ যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে।
আজ সোমবার সকালে এমনই ক্ষোভের কথা জানাচ্ছিলেন বিজয়নগরের একটি সিকিউরিটি হাউসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাপ্পী।
তিনি জানালেন, প্রতিদিন সকালে শাহজাদপুর থেকে বাসে চেপে বিজয়নগর যেতে হয়। অনেক সময় যানজটের কারণে সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারেন না। তাই হাতে এক ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বের হতে হয়। যানজটের কারণে এমন অভিজ্ঞতা রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মানুষের। একদিকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীরা যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, অন্যদিকে গণপরিবহনের চালকরাও যানজটে অতিষ্ঠ।
তারাও বলছেন, এ পরিস্থিতি থেকে উন্নতি করতে না পারলে রাজধানী বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে যাবে। সরেজমিন প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা-মালিবাগ সড়কে দেখা যায়, সপ্তাহের অন্যান্য কর্মদিবসের মতো আজও থেমে থেমে চলছে যানবাহনগুলো। রাস্তায় গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে। যানজট পরিস্থিতি এমন যে, কয়েক মিনিট পর গাড়ি এককদম সামনে এগুচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে কিছু পথ হেঁটে কিছু রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন। একদিকে গরম অন্যদিকে সকাল সকাল যানজটের নিত্য ভোগান্তিতে জীবন ওষ্ঠাগত বলে জানালেন মতিঝিলের কম্পিউটার এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী আলী আজম। তিনি বলেন, ‘এতো ভোগান্তি পাড়ি দিয়ে কোনো কাজে মনযোগ দিতে পারি না। সকাল-বিকেল একই ভোগান্তি যেন নিত্য দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। মাঝে-মধ্যে মন চায় এ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদে আটকে আছি।
এদিকে যানজটের একই চিত্রের খবর জানা গেছে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম সূত্রে। রাজধানীর শাহবাগ মোড়কে ঘিরে থাকা সবগুলো সড়কে যাত্রীদের কয়েকটা সিগনাল অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মূলত রমনা মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ রাস্তার দুদিকে গাড়ির অনেক্ষণ পরপর চলছে। একই চিত্র মিরপুর রোডের। থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। সড়কের বিভিন্ন অংশে খোঁড়াখুঁড়ি যানজটের বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগে বাড্ডা এলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, রামপুরা থেকে উত্তরা গামী রাস্তা যানজট বেশি রয়েছে। সকালে সব অফিসমুখী গাড়ির চাপের কারণেই যানজট সৃষ্টি হয়। বনশ্রী থেকে আসমানী পরিবহনে কুড়িল বিশ্বরোডের উদ্দেশ্যে ওঠা ইলিয়াস হোসেন বলেন, আইডিয়াল কলেজের মোড় পার হওয়ার পর থেকে যানজট। বসুন্ধরায় কখন পৌঁছাব বুঝতে পারছি না। এক পা এগোলে, মনে হচ্ছে দুই পা পেছাচ্ছে! প্রায় একই কথা বলেন, উত্তরাগামী ভিক্টর পরিবহনের যাত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, রামপুরা ব্রিজের পর থেকে গাড়ি ৫ মিনিট পর পর এক কদম এগোচ্ছে। গন্তব্যে কখন পৌঁছাবো বুঝতে পারছি না। যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের শিকড় পরিবহনের যাত্রী অনন্ত কুমার বলেন, মিরপুর থেকে বিজয় সরণী এসেছি এক ঘণ্টা লেগেছে। যাবো যাত্রাবাড়ী, কতক্ষণ লাগেবো আল্লাহই জানেন। ওই বাসের চালক মুনিরুল ইসলাম বলেন, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই সকালেই যানজট থাকে। তবে আজকে যানজটের পরিমাণটা বেশি। সাধারণত মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা, কিন্তু রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ ঘণ্টা, কখনো ৫ঘণ্টাও লেগে যায়। সময় বাঁচাতে পল্টন থেকে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে করে বারিধারা আসা অনিসুজ্জামান বলেন, পল্টন থেকে সাধারণ বাইকে আসতে ৩০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট লাগে। কিন্তু আজকে দেড় ঘণ্টা লেগেছে বাইকে আসতে। তাও আবার মেইন রাস্তা দিয়ে আসেনি, অলিগলির রাস্তা দিয়ে আসছে।