সাবেক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় মিললো ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৭ এএম, ১৩ মার্চ,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৯ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাজারে ভোজ্যতেলের সংকটকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি লাভের আশায় ৫১২ লিটার তেল মজুত করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ছয়দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে এসব তেল বাসায় মজুত করেন তিনি। অবশেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এলাকার ওই বাসা থেকে ৫১২ লিটার তেলসহ লায়েকুজ্জামানকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান। এর পাশে অবস্থিত শ্বশুরের বাসাটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই বাসাতেই তিনি ৫১২ লিটার তেল মজুত করেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরের নেতৃত্বে একটি টিম ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে এই পরিমাণ তেল জব্দসহ লায়েকুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার লায়েকুজ্জামানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে এসব তেল কিনে জমা করে রাখেন। এসব তেল কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রশিদ দেখান।
পরে রশিদটি যাচাই করে দেখা গেছে, সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার তেল কিনেছেন। বাকি তেল তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রশিদের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলের পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন। গ্রেফতার লায়েকুজ্জামান মনে করেছেন, যেহেতু বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে, কয়েকদিন পর রমজানে আরও দাম বাড়তে পারে। তাই বাড়তি লাভের আশায় তিনি তেল কিনে মজুত করে রাখেন।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লায়েকুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তার সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে পেলে তাকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও এমন কাজ করেছেন কিনা, কিংবা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, লায়েকুজ্জামান কোনো ব্যবসায়ী নন, ডিলারও নন। প্রাথমিকভাবে এটি তার ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে তিনি তেল মজুত করেছেন। ৫১২ লিটার তেল মজুত করা ফৌজদারি অপরাধ, এটি সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াস। ৪০ লিটার তেল এক দোকান থেকে কিনেছেন, বাকিগুলো কোথা থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। গত ৬ মার্চ থেকে ছয়দিনে লায়েকুজ্জামান বিপুল পরিমাণ এই তেল মজুত করেছেন জানিয়ে ডিসি বিপ্লব বলেন, ৪০ লিটারের বাইরে বাকি তেল কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। কারণ অন্য জায়গা থেকে কিনলে সেটার রশিদ থাকতো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার তেল বিক্রি করলেন এ বিষয়ে তাকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এছাড়া ভোজ্যতেলের এই সংকট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুতদারী করছে কি না প্রতিনিয়ত তা মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা যখনই সংবাদ পাবো, অভিযান পরিচালনা করবো। জনসাধারণকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এ ধরনের মজুতদারী করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার।