সদরঘাট-মিরপুর রিকশা ভাড়া ১৫০০ টাকা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৮ এএম, ২৪ জুলাই,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানীর মিরপুরের লোডেস্টার ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টসের ফিনিশিং বিভাগের অপারেটর লিজা আক্তার। ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বরিশালে যান। লকডাউনের কারণে আজ শুক্রবার ভোর ৬টায় লঞ্চ থেকে সদরঘাটে নামেন। সদরঘাটে নেমে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে দেখেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু যানবাহন হাতেগোনা। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা অপেক্ষা শেষে মিরপুরে যাওয়ার জন্য তিনি ও তার এক সহকর্মী রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম শুরু করেন। এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে রিকশাচালক ভাড়া দেড় হাজার টাকা দাবি করেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে লিজা আক্তার বলেন, ‘সারা মাস হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বেতন পাই ৮ হাজার টাকা। ঈদে বাড়ি গিয়ে টাকা শেষ। আছে মাত্র ৫০০ টাকা। এখন মিরপুরের রিকশা ভাড়া দেড় হাজার টাকা কোথায় পাব?’ রিকশাচালকের কাছে এমন ভাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এখান থেকে মিরপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। সেগুলো ইঞ্জিনে চলে। আর এত দূরের পথ প্যাডেল করে নিয়ে যেতে হবে। তাই ভাড়া দেড় হাজার টাকা চেয়েছেন।’ এক পর্যায়ে লিজা ভাড়া ৮০০ টাকা দিতে চাইলেও রিকশাচালক ১১০০ টাকার কমে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন। লিজা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। শুধু লিজা একা নন, আজ শুক্রবার ঈদের তৃতীয় দিনে লকডাউন শুরু হওয়ায় গণপরিবহনসহ সকল (রিকশা ও জরুরি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া) প্রকার পরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চের হাজার হাজার যাত্রী ঘরে ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েন। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন রুট থেকে ছেড়ে লঞ্চগুলো ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে সদরঘাটে এসে পৌঁছায়। যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা কম হওয়ায় রিকশাচালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করেন। ফলে সদরঘাট ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে শত শত যাত্রী যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করেন। অপেক্ষাকৃত যারা অর্থবিত্তের মালিক তারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারলেও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিপাকে পড়ে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাদের বাসা তাদের কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ শেয়ারে ভ্যান ভাড়া করে গন্তব্যে যান। কেউ কেউ আবার পরিবার ও আত্মীয়দের ফোন করে এলাকা থেকে ভ্যান ও রিকশা ভাড়া করে সদরঘাটে পাঠায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তাদের অনেকে বলেন, তারা লকডাউনের কথা মাথায় রেখে ভোর ৪টায় সদরঘাট পৌঁছান। তাদের ধারণা ছিল, ভোর ছয়টা পর্যন্ত গাবতলী, সাভার ও গাজীপুর রুটে বাস চলবে। রাস্তা খালি থাকায় তারা সহজে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু ভোর ৪টায় নেমেও দেখেন সব বন্ধ। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ। কেউ লাগেজ ও ব্যাগ থাকায় শিশু ও নারীদের নিয়ে পায়ে হেঁটে আসছেন। কেউ ভ্যান আবার কেউ রিকশায় গাদাগাদি করে ছুটছেন। অসংখ্য পরিবারকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে। সদরঘাট টার্মিনালের বাইরে ২৩ দিন বয়সী এক শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি। রিকশার ভাড়া কয়েকগুণ শুনে আর ভাড়া বলার সাহসই করলেন না। সকাল ১১টার সময়ও সদরঘাট, ভিক্টোরিয়া পার্ক, হাইকোর্ট এবং গুলিস্তান এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।