লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ তবুও রাস্তায় যানজট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২০ এএম, ১৩ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১৪ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত দুই সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) আগামী বুধবার (১৪ জুলাই) শেষ হচ্ছে। ঘোষিত লকডাউন শেষ হতে এখনো আরও দুই দিন বাকি থাকলেও রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়কে গত কয়েক দিনের তুলনায় অধিক সংখ্যক রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ও প্যাডেলচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বেশি চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে বিপুল সংখ্যক মানুষকে চলাচল করতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটও দেখা যায়। লকডাউন শুরুর প্রথম সপ্তাহখানেক বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি, গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কারণ এমনকি রাস্তাঘাটে বের হওয়া মানুষকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদদ্যের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হলেও গত দু/একদিন যাবত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কম দেখা যায়।
আজ সোমবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অধিক যানবাহন ও জন চলাচলের দৃশ্যে চোখে পড়ে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষকে রিকশায় চলাচল করতে দেখা যায়। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহন না চলার সুযোগ নিয়ে রিকশাচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন যাবত করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অব্যাহতভাবে বৃদ্ধিতে শঙ্কিত রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল দেশে করোনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ১১ হাজার ৮৭৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত ও সারাদেশে ২৩০ জনের মৃত্য হয়। এ অবস্থায় তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউনের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা উচিত বলে মন্তব্য করছেন। আগামী ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সরকার লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করবে নাকি শিথিল করবে তা নিয়ে জনমনে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। কেউ বলছেন লকডাউনের মেয়াদ বাড়লেও বিভিন্ন নিয়মকানুন শিথিল হতে পারে।
আজ সোমবার সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সার্ক ফোয়ারা গোলচত্ত্বরের চারপাশে অসংখ্য যানবাহন চলাচল করছে। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে যানজটে পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে সাইরেন বাজিয়ে উল্টোপথে যেতে দেখা যায়। কারওয়ানবাজারে রিকশার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন রাজধানীর বিজয়নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইসতিয়াক ইসলাম।
তিনি জানান, কারওয়ানবাজার থেকে বিজয়নগরের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হলেও এখন রিকশাচালক ৯০ টাকা চাইছেন। তিনি ৮০ টাকা বললেও তারা যেতে রাজি হচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
জনগণের প্রশ্ন কিসের লকডাউন, সবইতো দেখি খোলা: কিসের লকডাউন, সবইতো দেখি খোলা: কিসের লকলডাউন চলছে। সবাইতো দেখছি বাইরে বের হচ্ছেন। বলছে অফিস বন্ধ থাকবে, এখনতো দেখি সবই খোলা; রাস্তায় জ্যাম’, লকডাউন কেমন দেখছেন- এমন প্রশ্ন করতেই এক নাগারে বলছিলেন শামসুল ইসলাম নামের
এক রিকশাচালক।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়ে যানজটে পড়েছেন তিনি। সিগন্যাল ছাড়ার অপেক্ষা করতে করতেই কথা হচ্ছিল শামসুল ইসলামের সঙ্গে। গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছে তিনি আবার বললেন, একেক দিন একেক চিত্র দেখি। গতকাল দেখলাম কোনও যানজট নেই, গতকাল মোড়ে মোড়ে যানজট। আজতো কোনও ট্রাফিক পোস্টে চেকও হচ্ছে না। অবশ্য এতে রিকশার যাত্রী বেড়েছে বলে জানালেন এই রিকশাচালক। করোনার ভয়াবহ প্রকোপ ঠেকাতে গত ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। একদফা বাড়িয়ে এর সময়সীমা ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে। লকডাউনের গতকাল নবম দিনে রাজধানীর সড়ক জুড়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট দেখা গেছে। বিশেষ করে রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল আর আর বিভিন্ন পণ্যবাহী যানের কারণে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অফিস সময়ে রাজধানীর চিত্র এটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অফিস চালু থাকার কারণেই মানুষ সড়কে বের হচ্ছেন, যে কারণে এই যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে নগরীর দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, কমলাপুর, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফকিরাপুলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন পুলিশ সদস্য ইসমাইল হোসেন।
তিনি জানালেন, লকডাউনের অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল যানবাহন, বিশেষ করে রিকশার সংখ্যা বেশি। সড়কে যানজটও আছে। প্রতি সিগন্যালে দুই থেকে তিন মিনিট করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এদিকে সকালে অফিস সময়ে রিকশাসহ সাধারণ মানুষের চলাচলের বহনের তীব্র সংকট দেখা গেছে। সড়কে বিপুল সংখ্যা রিকশা দেখা গেলেও তা চাহিদার তুলনায় কম। এ জন্য বহু সংখ্যক মানুষকে হেঁটে অফিসে পৌঁছতে হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। দৈনিক বাংলা এলাকায় কথা হলো বেসরকারি অফিসে কর্মরত যুবক আরিফুলের সঙ্গে। পাশেই দাঁড়ানো তার আরেক সহকর্মী জিসান মাহমুদ।
আরিফুল জানালেন, সকালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে প্রায় একই সময়ে রওনা হয়েছিলেন দুজনে, অফিস থেকে তাদের দূরত্বও প্রায় একই। জিসান এসেছেন রিকশায়, আর তিনি হেঁটে। এতে জিসানের চেয়ে ১০ মিনিট আগেই এসে পৌঁছেছেন বলে জানালেন তিনি। জিসান জানালেন, সড়কে যানজট বেশি। সড়কে প্রচুর রিকশা আর ব্যক্তিগত গাড়ি, যার কারণে দেরি হয়েছে। হেঁটে আসলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গেই আসতে পারতাম।