পরীমনিকে ধষর্ণ-হত্যাচেষ্টা : এক গার্মেন্ট মালিকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩২ এএম, ১৯ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪১ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৯ জুন মধ্যরাতে ঢাকা বোট ক্লাবে অভিনেত্রী পরীমনিকে ঘিরে আবর্তিত ঘটনার সঙ্গে একজন তৈরি পোশাক কারখানার মালিক জড়িত রয়েছেন। যিনি ওই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ডিবির একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তারা ওই পোশাক ব্যবসায়ীকে খুঁজছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমনির করা মামলায় উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে গত সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ব্যবসায়ী ও উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ মাহমুদসহ তুহিদ সিদ্দিকী অমি নামের আরেক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। ওই মামলায় আরও ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবারের ওই অভিযানে গোয়েন্দা পুলিশ ৩ জন নারীকেও গ্রেফতার করে। পাশাপাশি সেখান থেকে দেশি-বিদেশি মদ ও ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় নাসির ও অমিসহ গ্রেফতার ৩ নারীর রিমান্ড চলছে।
এজাহারে পরীমনি লিখেছেন, শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পাশাপাশি নাসির জোর করে খাওয়ানোর জন্য তার মুখে মদের বোতল ঠেসে ধরেন। এছাড়া অমিসহ অজ্ঞাতনামা চার ব্যক্তির সহযোগিতায় নাসির তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। সোমবার গ্রেফতার হওয়ার পর জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির দাবি করেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সোমবার উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের যে বাসা থেকে নাসির ও অমিসহ তিন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার তত্ত্বাবধায়ক শাহ আলম বলেন, মাদক মামলায় অভিযুক্তদের একজন ২৪ বছরের নাজমা আমিন বৃষ্টি সম্পর্কে অমির স্ত্রী। যদিও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে নাজমাকে অমির বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযানকালে গ্রেফতার হওয়া মাদক মামলায় অভিযুক্ত অন্য দুই নারী হচ্ছেন- ১৮ বছর বয়সী লিপি আক্তার ও ১৯ বছর বয়সী সুমি আক্তার। উত্তরা পাঁচ নম্বর সেক্টরে একটি ছয়তলা ভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিন মাস আগে লিপিকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন নাসির।
ওই তত্ত্বাবধায়ক জানান, লিপি নিজেকে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেন। যিনি ফ্ল্যাটে বেশিরভাগ সময় একাই থাকতেন। জাহাঙ্গীর বলেন, দুই-তিন সপ্তাহে নাসির স্যার একবার করে ফ্ল্যাটে আসতেন। ছয়-সাত ঘন্টা থাকতেন। তবে একই এলাকার বাসিন্দা আরেক নারী সুমি আক্তারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। গতকাল তার বাসার পাশের এক দোকানদার জানান, গ্রেফতারের পর ওই নারীর ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মাদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, অমি ও নাসির নিজেরা গ্রহণের পাশাপাশি বিক্রির জন্য মাদক সংগ্রহ করতেন। নাজমা, লিপি ও সুমিও মাদক নিতেন। সেই সঙ্গে এগুলো বিক্রির কাজে সহযোগিতা করতেন। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের বিষয়ে যদি পরীমনির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিছু সন্দেহভাজন ডাকাত গ্রেফতারের ঘটনা কেন্দ্র করে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন হাফিজ আক্তার। পরীমনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে অল কমিউনিটি ক্লাবের ঘটনাটি বিবেচনায় রাখা হবে কি না, জানতে চাইলে হাফিজ বলেন, ‘মামলার শুরু থেকে সবকিছুই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আসবে।’ গত বুধবার অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ৭ জুন ক্লাবের এক সদস্যকে নিয়ে পরীমনি তার দুই সঙ্গীসহ এখানে আসেন। ইকবালের ভাষ্য, সেদিন পরীমনি বিশৃঙ্খল আচরণের পাশাপাশি ক্লাবের গ্লাস, অ্যাশট্রে ও প্লেট ভাঙচুর করেন। পরে পরীমনির কাছ থেকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে গুলশান থানাপুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং পরীমনি গুলশান থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন।
সংসদে জাপার এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু নাসির ইউ মাহমুদের মুক্তি দাবি করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য টিপু এই দাবি জানান। টিপু তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি নাসির উদ্দিনকে গত ৩৫ বছর ধরে চিনি। তাকে আমি ছাত্রাবস্থা থেকেই জানি। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সরকারকে কর দেন।’