খাদ্যের মোড়কে পলিথিন বা পুরনো খবর কাগজ ব্যবহারে সতর্ক করছে কর্তৃপক্ষ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৪৮ এএম, ১৩ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১০ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জনসচেতনতার অংশ হিসেবে খাদ্য স্পর্শক উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পর্কিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, খাদ্যের মোড়কে পলিথিন বা পুরনো খবরের কাগজ ব্যবহার করা যাবে না।
যদিও বাস্তবতা হলো সারাদেশে রেস্তোরাঁ বা খোলা বাজারের দোকানপাটে যেসব খাদ্য বিক্রি হয় তার বেশিরভাগেই পলিথিন বা প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এমনকি রেস্তোরাঁগুলো পার্সেল হিসেবে খাবার নিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে খাবারকে পলিথিনে দিয়ে তারপর তা প্যাকেট করা হয়। গত সোমবারই মহাখালী এলাকার একটি হোটেল থেকে খাবার পার্সেল নিয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানর কর্মী শাহতা পারভীন।
‘তিন ধরনের খাবার ছিল তিনটি ছোট পলিথিনে। ওই তিনটি পলিথিন আবার একটি কাগজের প্যাকেটে দিয়েছে তারা। এর মধ্যে একটি পলিথিনে গরম স্যুপ ছিল,’ বলছিলেন তিনি। তিনি অবশ্য স্বীকার করেন যে, এসব বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি নিজেও অবহিত নন। ‘আমি জানি যে খাবার নষ্ট হলে বা অতিরিক্ত দাম নিলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যায়। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বা এ বিষয়ে ক্রেতা হিসেবে আমার কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার সেটি আমি জানতাম না।’
অভিযোগ করতে পারেন ভোক্তারা
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন পরিচালক আবু সাইদ মো. নোমান বলছেন, প্রতিনিয়ত বাজার থেকে খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং একই সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিদর্শন করছে।
‘ভোক্তা ক্রেতাদের অভিযোগের ব্যবস্থাও আছে। কেউ অভিযোগ করলে তার ভিত্তিতেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের হটলাইন নম্বর ৩৩৩ অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারেন। আরেকজন পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করার ওপর এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
‘আমাদের এখন ৬০ ভাগ কাজ হলো গণসচেতনতা তৈরির আর ৪০ ভাগ হলো এনফোর্সমেন্ট। ক্রেতা ও বিক্রেতা সবাইকে জানানোর চেষ্টা করছি যে, কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না,’ বলছিলেন মিস্টার রহমান।
তিনি বলেন, লোকবল কম থাকলেও এখন জেলা পর্যায় পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ও পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর উপজেলায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা আমাদের হয়ে কাজ করছেন। ‘কাজের সুযোগ ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। আমরাও বেশি ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা কর্মসূচি চলছে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত,’ বলছিলেন তিনি। মিস্টার রহমান বলেন, পরিদর্শকরা নিয়মিত বাজার মনিটর করে বা কোনো অভিযোগ পেলেও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ‘খাদ্য দূষিত করার অভিযোগ পেলে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও শাস্তি দেয়ার নিয়ম আছে। তবে এসবের চেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি ক্রেতা ও বিক্রেতাকে সচেতন করার জন্য।’
মগবাজারের একটি রেস্তোরাঁর একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা স্ট্যাপলার পিন এখন আর ব্যবহার করেন না। ‘তবে পার্সেল খাবার নেয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতারাই পলিথিন দিতে বলেন। আর পরোটা বা লুচি-জাতীয় খাবারের সাথে অনেকে পুরনো খবরের কাগজ চান বলে আমরা দেই। তবে আইনে নিষেধ থাকলে এখন থেকে এগুলো আর দিবো না।’
খাদ্য স্পর্শক বা মোড়ক : ১২ বিষয়ে সতর্ক করলো খাদ্য কর্তৃপক্ষ :
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বারটি বিষয়ে সতর্ক করে তা মানার জন্য খাদ্য স্পর্শক উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, খাদ্য মোড়কজাতকারী, খাদ্য ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের খাদ্য স্পর্শক ক্রয় ও বিক্রির ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে।
তারা বলছেন, খাদ্য স্পর্শক হলো এমন উপকরণ যা ইতিমধ্যে খাদ্যের সংস্পর্শে আছে বা আসার সম্ভাবনা আছে।
নরসিংদীর নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মারুফা হক বলছেন, খাবার তৈরি থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত যে কোনো পর্যায়ে এসে খাদ্য দূষিত হতে পারে।
‘তাই এর সব পর্যায়ে যারা জড়িত থাকেন তাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে তাদের কারও কারণে খাবারটি নষ্ট হতে না পারে,’ বলছিলেন তিনি।
আর খাদ্য দূষিত হিসেবে ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ হলে সর্বনিম্ন তিন লাখ থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত শাস্তির সুযোগ ছাড়াও কারাদন্ডের বিধান আছে।
‘অপরাধের তারতম্যের ওপর শাস্তি প্রয়োগ হয়। কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের নিয়ম আছে আইনে,’ বলছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক আব্দুর রহমান।
যে বারটি বিষয়ে সতর্কতা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো :
খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন খাদ্য স্পর্শক বা মোড়ক খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা যাবে না।
এমন কোনো খাদ্য স্পর্শক বা মোড়ক ব্যবহার করা যাবে না যা খাদ্যের রং, গন্ধ ও উপাদানের পরিবর্তন ঘটায়।
খাদ্য স্পর্শক উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
খাদ্যের মোড়কে বা প্যাকেটে ধাতব বস্তু (স্ট্যাপলার/সেফটি পিন) ব্যবহার করা যাবে না।
গরম খাবার বা পানীয় পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিম্নমানের ও রিসাইকেলড পলিথিন বা পুরনো খবরের কাগজ ব্যবহার করা যাবে না।
গরম খাবার বা পানীয় পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিম্নমানের ও রিসাইকেলড প্লাস্টিক কাপ/বক্স/পাত্র ব্যবহার করা যাবে না।
খাদ্য স্পর্শক হতে নির্গমিত বস্তু ও বস্তুকণা অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
ভোক্তার জন্য বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য খাদ্য স্পর্শক বা মোড়কে উল্লেখ করা যাবে না।
খাদ্য স্পর্শক ব্যবসায়ীকে খাদ্য স্পর্শক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিপালিত শর্তাবলী, অনুমতি, মান, ফলাফল, নিরাপত্তা ও প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত নথিপত্রের মুদ্রিত বা ইলেকট্রনিক কপি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
খাদ্য স্পর্শক উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ক্রয়ের রসিদ বা চালান খাদ্য স্পর্শকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তিন মাস সংরক্ষণ করতে হবে।
খাদ্য স্পর্শক উৎপাদক বা বিপণনকারীর নাম, ঠিকানা ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর স্পষ্টভাবে খাদ্য স্পর্শক বা মোড়কে উল্লেখ করতে হবে।
নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত খাদ্য স্পর্শক উৎপাদন, আমদানি ও বিতরণের যে কোনো পর্যায়ে তার মান যাচাইয়ের জন্য খাদ্য স্পর্শক স্থাপনা পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে।- বিবিসি বাংলা।