কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের ১১৭ গ্রামে আর্সেনিকে আতঙ্কে মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৭ পিএম, ৯ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৯ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের সবক’টি উপজেলার প্রায় ১১৭টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
মরনঘাতক আর্সেনিক নামের মহাদূর্যোগে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে গবেষনা ও রোগ প্রতিরোধে সরকারি- বেসরকারী এনজিও ও বিদেশী আর্থিক সংস্থাগুলোর তৎপরতা দেখা গেলেও নাটকীয় বাণিজ্যের কারনে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নানা বির্তক চলছে।
স্থানীয় গবেষকদের একাধিক সূত্র জানায়, এ নিয়ে আমেরিকার সিকাগো ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর্সেনিক গবেষনা প্রকল্প বাংলাদেশে ২০০৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, ব্র্যাক ও এডিপি ওয়ার্ল্ড ভিশন, সূর্যের হাসি ক্লিনিক ও মেরিষ্টোপসহ একাধিক দাতাসংস্থার অর্থায়নে বৃহত্তর লাকসামের লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় আর্সেনিক মুক্তকরণে ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও তা অনেকটাই অনুপস্থিত।
গত ৫/৬ বছর পূর্বে প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই সহস্রাধিক লোককে আর্সেনিক রোগী হিসাবে চিহ্নিত এবং কয়েক হাজার লোককে এ রোগের চিকিৎসার আওতায় আনে ওই সকল সংস্থা।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বেশ ক’টি সরকারী/বেসরকারী সামাজিক সংগঠন ৪ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক লোক নিয়ে গবেষনা ও আর্সেনিকমুক্ত কার্যক্রম চালায়। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলার ৩২টি গ্রামে ৬ হাজার ৮’শত, মনোহরগঞ্জ উপজেলার ২৭টি গ্রামে ৬ হাজার ৩’শত, লালমাই উপজেলার ২৩টি গ্রামে ৩ হাজার ৬’শত ও নাঙ্গলকোট উপজেলার ৩৫টি গ্রামে ৭ হাজার ১’শত লোককে আর্সেনিক আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করে তারা।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের অপর একটি সূত্র জানায়, লাকসাম পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, লালমাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও নাঙ্গলকোট উপজেলার পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নসহ ৪ উপজেলার ১১৭টি গ্রামের প্রায় ১৫ ভাগ মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ওইসব এলাকায় আর্সেনিক রোগীর মাঝে গবেষনা ও রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন বেসরকারী আর্থিক সংস্থা প্রায় ৩ হাজার সনোফিল্ডার এবং বিপুল পরিমান ঔষধ বিতরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতায় সভা-সেমিনার ও সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকারের বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরলেও বর্তমান মহামারী করোনা ভাইরাসকালে তার কোন প্রতিকার নেই।
সূত্রটি আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের আইসিডি. ডিআরবি. ভার্টমাউন্ট, মেডিকেল স্কুল এ গবেষনা কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং ইউনিসেফ ও ভিপিএইচই’র সহায়তায় আর্সেনিক গবেষনা কাজে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহযোগিতার কথা থাকলেও বৃহত্তর লাকসামে এদের কোন তৎপরতা কিংবা কার্যক্রম নেই।
এছাড়া এ অঞ্চলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আর্সেনিক মহাদূযোর্গ হিসেবে ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ টিউবওয়েল আর্সেনিকযুক্ত, ৫৬ ভাগ টিউবওয়েল মলযুক্তে আক্রান্ত।
বিভিন্ন সংস্থাগুলো ৩ বছর মেয়াদে আর্সেনিক মুক্ত বেশক’টি টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে অনেকটাই পিছিয়ে। গত কয়েক বছরে স্থাপিত প্রতিটি টিউবওয়েল থেকে আর্সেনিক মুক্ত বিশূদ্ধ পানির সুবিধা অনেক তলানিতে।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব অতি মুখ্য হলেও এ মহাদূর্যোগ আর্সেনিকের ভয়াবহতায় রোধে কারো যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। বর্তমান মহাদূর্যোগ আর্সেনিক সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন দপ্তরই মুখ খুলতে নারাজ।