ঐতিহ্যবাহী পরিবহন গরু গাড়ী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২০ পিএম, ৩ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৬ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা সর্বত্র জনচলাচল ও মালামাল পরিবহনে একটা সময় গরুর গাড়ির বিকল্প কোন যানবাহন ছিলো না। শতাব্দির পর শতাব্দিকাল থেকে এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবহন ছিলো গরু গাড়ি। কালের আবর্তে এবং বর্তমান প্রযুক্তির যুগে গরুর গাড়ির এখন আর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান প্রযুক্তির আধুনিক সভ্যতার যুগে যন্ত্রচালিত লাঙ্গল, পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর-পিকআপসহ নানা যন্ত্রের পরিবহন বাজারে আসার ফলে বিলুপ্তির দিকে চলে যায় গরিবের পরিবহন গরুর গাড়ি। কৃষি ও কাঁচামালের প্রসিদ্ধ বাজার এবং বানিজ্যিক নগরীখ্যাত বৃহত্তর লাকসামের প্রিয় শহর দৌলতগঞ্জ উত্তর বাজার, নোয়াখালী রেলওয়ে লাইনের পাশে ও পূর্ব বাজারে সারি সারি গরু গাড়ি অবস্থান করতো।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলা গুলোর সবকটি গ্রামের লোকজনের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো দু’চাকার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এ অঞ্চলের অনেকেই গরুর গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এককালের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি বর্তমান প্রযুক্তির কাছে হেরে গিয়ে নিজেরাই আজ বিলুপ্তির দিকে। নতুন নতুন প্রযক্তির পরিবহন আসায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে গরু গাড়ি প্রাচীন কাল থেকেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবহন করে চলছিলো।
বিগত নব্বই দশকের পর থেকে ওইসব গরুগাড়ি ধীরে ধীরে না ফেরার দেশে চলে গেছে। প্রযুক্তির যুগে পরিবর্তনে হারিয়ে যায় গ্রামবাংলার এ বাহন। এ অঞ্চল ঘুরেও একটি গরু গাড়ির খোঁজ কোন এলাকায় পাওয়া যাবে না। সে কারনে শহর কিংবা গ্রামের ছেলে-মেয়েদের কাছে গরুগাড়ি শব্দটি আজ অপরিচিত।
গরুগাড়ি মালিকদের পরিবারের লোকজন জানায়, ব্রিট্রিশ শাসন থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত এ অঞ্চলের জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি আমাদের বাপ-দাদা ও তারও আগের উত্তরসূরীরা গরুগাড়ি চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো।
অপরদিকে বৃষ্টির দিনে কিন্তু পুরো গাড়ি জুড়ে ছাউনি দেয়া থাকতো। বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে গরুগাড়ির প্রচলন ছিলো তৎকালীন সময়ে ব্যাপক আকারে। এছাড়া বিয়ের বর-কনে উভয়ের স্বজনরা চলাচলের একমাত্র বাহন গরুগাড়ি ছাড়া কোন অনুষ্ঠান যেন কল্পনাও করা যেতো না।
আর তাই গরুগাড়ি কিংবা চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘‘ও কি গাড়িয়াল ভাই কিংবা আস্তে চালাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, চেংরা বন্ধুরে, মুই আরঁ বাপের বাড়ি যাইমু ও গাড়িয়াল সহ অসংখ্য গান, কবিতা, জারি ও পালাগান।
এ ব্যাপারে জেলা- উপজেলা বয়ঃবৃদ্ধ লোকদের কাছে তৎকালীন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন গরুগাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা গরুগাড়ি সম্পর্কে নানা চিত্র তুলে ধরেন যা আজকের প্রযুক্তিযুগে নতুন প্রজন্মের কাছে একটা ইতিহাস।