আলী নেওয়াজ খৈয়ম
স্মৃতি কেন বন্দি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:০৪ পিএম, ১৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সোনিয়া আক্তার স্মৃতি রাজবাড়ী জেলা শহরের উদ্যোগী, কর্মচঞ্চল এক মানবিক নারী। লেখাপড়া শেষ করে সংসার সামলিয়ে মানবিক কাজে ইতিমধ্যে সারা বাংলাদেশে তার নাম উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত মানুষ ও রোগশয্যায় কাতর বিপর্যস্ত মানুষের প্রতি গভীর মমত্ব নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সোনিয়া আক্তার স্মৃতি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর্ত-মানবতার সেবায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। তিনি উদ্দেশ্য পূরণে অল্প বয়সেই নানা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান স্মৃতি। একদিন হাসপাতালে রোগাগ্রস্ত কাতর একজন মানুষের করুণ আবেদনে স্মৃতি তার নিজের শরীর থেকে রক্ত দেন। সেই কাতর মানুষের করুণ আবেদন স্মৃতির কোমল হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তারপর থেকে যারই রক্তের প্রয়োজন হয়েছে স্মৃতি তাকেই রক্ত দিয়েছেন। এভাবে কিছুদিন চলতে চলতে স্মৃতি তার বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে গড়ে তোলেন ব্লাড ডোনার্স ক্লাব। শহর-গ্রামের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী যোগ দেয় স্মৃতির সাথে। এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয় তাদের। ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের মাধ্যমে বিপদসংকুল রোগীর জীবন বাঁচাতে একের পর এক তার এ রক্তদান কর্মসূচি চলতে থাকে। স্মৃতির এই রক্ত দানের সংবাদ নিজ জেলা রাজবাড়ীর সীমানা পেরিয়ে সারাদেশে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ময়করভাবে স্মৃতি প্রায় ২৭ হাজার ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে রোগাগ্রস্ত মানুষকে দিয়েছেন! মানুষের প্রতি তার এই অদম্য ভালোবাসা তাকে আজ রক্তকন্যা উপাধিতে ভূষিত করেছে। যে কেউ এখন স্মৃতির নামের আগে রক্তকন্যা কথাটি ব্যবহার করে।
শুধু তাই নয়, যেখানেই মানুষ বিপদসংকুল হয়েছে সেখানেই দলবল নিয়ে ছুটে গেছেন স্মৃতি। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি করোনায় অদম্য সাহসে স্মৃতি ছুটেছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। পথে-প্রান্তরে, লোকালয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনা মহামারির দুর্যোগে দরিদ্র মানুষের খাবার, অসুস্থ রোগীর ওষুধপত্র নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থেকেছেন স্মৃতি।
নানা মানবিক কাজে স্মৃতির তুলনা নেই। কিনে দিয়েছেন কারো রিকশা, ভ্যান, গরু-ছাগল, যাতে করে দরিদ্ররা একটু সবল হয়ে দাঁড়াতে পারে। বন্ধুদের দেয়া টাকা, বিদেশে অবস্থানরত তার স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়েছেন অকাতরে। তার স্বামী স্মৃতির এই মহতি কাজে সারাক্ষণ তাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এই মানবিক কাজের ভেতর দিয়ে স্মৃতি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ক্রমশ কর্মী থেকে নেতৃত্বের পর্যায়ে উঠে এসেছেন। স্মৃতির এই উত্থানে ঈর্ষান্বিত হয়েছে অনেকেই। ফেসবুকে নানা শ্রাব্য-অশ্রাব্য ভাষায় কুরুচিপূর্ণ কথা তাকে শুনতে হয়েছে। রাজবাড়ীর নোংরা কিছু মানুষের গাত্রদাহ হয়ে ওঠেন স্মৃতি। তাই স্মৃতির ক্ষতি করতে একের পর এক নানা কর্মকান্ড চালিয়েছে তারা। স্মৃতি দমবার পাত্রী নন। তাই শত বাধা অতিক্রম করে তার কাজে অবিচল থেকেছেন।
কিছুদিন আগে দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন স্মৃতি তার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেননি। তার সমস্ত আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে যে মানুষটিকে ঘিরে সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যখন অশ্রাব্য ভাষায় কেউ কটূক্তি করে তখন স্মৃতি তার প্রতিবাদ করবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই স্মৃতিকে গ্রেফতার করা হলো। আইন, মানবতা, নৈতিক বোধ সবকিছু ধুলোয় লুণ্ঠিত করে মধ্যরাতে দুই শিশু সন্তানকে ভীতি আর কান্নায় ভাসিয়ে বন্দি করা হলো স্মৃতিকে। স্মৃতি এখন বন্দি। এ যেন শুধু সোনিয়া আক্তার স্মৃতি বন্দি নন, বন্দি আজ গোটা বাংলাদেশ। বন্দি ভদ্রতা, শিষ্টাচার, নীতিবোধ, গণতান্ত্রিক চেতনা- সবই আজ বন্দি। তবুও স্মৃতি ভয় পান না। তাই গোটা বাংলাদেশ বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সকল রাজবন্দির সাথে স্মৃতির মুক্তি এক গণতান্ত্রিক সংগ্রামে রাজপথ ক্রমাম্বয়ে উত্তপ্ত করে তুলেছে। দেশনেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সে মহামুক্তির সংগ্রাম বাংলাদেশে আবার ফিরিয়ে আনবে গণতন্ত্রের অমোঘ বাণী-‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।’