সরকারি ঘর দেয়ার নামে ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল আ.লীগ নেতা আহসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৭ এএম, ২২ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিশেষ বরাদ্দে সরকারি ২০০টি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে দরিদ্রদের কাছ থেকে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক মো. আহসান ওরফে বাবু মন্ডলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মো. আহসান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের চাচাতো ভাই। ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবারগুলোর অভিযোগ, দেড় বছর আগে টাকা দিয়ে ঘর না পেয়ে এখন দিশেহারা তারা। টাকা দিতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন অনেকেই। তারা অভিযোগ করেন, চর গয়টাপাড়ার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ কর্মী মোকছেদ আলীর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে টাকা নিয়েছেন বাবু মন্ডল।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর চাপে মোকছেদ আলী বাড়ি ছেড়ে পলাতক আছেন। চর গয়টাপাড়া এলাকার আকবর আলী বলেন, বাবু মন্ডলের মাধ্যমে মোকছেদ আলী সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিয়েছেন দেড় বছর আগে। মোকছেদ আলী এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সরকারি ঘর পাবো এই আশায় চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে দিয়েছিলাম, বলেন তিনি। একই গ্রামের হায়দার আলী বলেন, তিনি সরকারি ঘর পেতে মোকছেদ আলীকে ৩৯ হাজার টাকা দিয়েছেন। টাকা নেয়ার সময় মোকছেদ বলেছিলেন বাবু মন্ডলের মাধ্যমে ২০০ সরকারি ঘর গরীব পরিবারকে নির্মাণ করে দেয়া হবে। আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ টাকা দিয়েছি। এখন ঘরও নেই, টাকা নেই আর মোকছেদও নেই। বাবু মন্ডলের কাছে আমরা পাত্তাই পাচ্ছি না, তিনি বলেন। একই এলাকার আবুল হোসেন বলেন, সরকারি ঘর পাইয়ে দিতে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন মোকছেদ আলী। বাবু মন্ডলের মাধ্যমে মোকছেদ আলী গ্রামে কয়েকটি সরকারি ঘর পাইয়ে দিয়েছিলেন এজন্য গ্রামের মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছিলেন। বাবু মন্ডলের কথা না বল্লে আমরা মোকছেদকে টাকা দিতাম না। টাকা দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি আমরা, তিনি বলেন। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ কর্মী মোকছেদ আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ২০০টি পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা তুলে বাবু মন্ডলের হাতে দিয়েছি। এর আগে বাবু মন্ডল টাকা নিয়ে গ্রামে কয়েকটি ঘর দিয়েছিলেন সেজন্য তাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
সরকারি বিশেষ বরাদ্দে ২০০টি ঘর নির্মাণ করা হবে এমন নিশ্চয়তা দিয়ে বাবু মন্ডল আমার মাধ্যমে ২০০টি পরিবারের কাছ থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। আমাকে ঘর নির্মাণের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেবেন সেজন্য তার কথামতো কাজ করেছি। এখন প্রতারণার শিকার পরিবারগুলোর চাপে আমি বাড়ি ছাড়া। বাবু মন্ডল ও তার লোকজনও আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন, বলেন মোকছেদ। দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে টাকা তুলে বাবু মন্ডলকে দিয়েছেন জানিয়ে গত ১২ আগস্ট কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন মোকছেদ।
অভিযোগ নিয়ে মো. আহসান ওরফে বাবু মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি এসব অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি অভিযোগের বিষযটি শুনেছেন কিন্তু মোকছেদ আলীকে তিনি চেনেন না।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এটা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। আমার ও আমার চাচাতো ভাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, তিনি জানান। মোকছেদ আলীর সাথে বাবু মন্ডলের কথোপকথন ও টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে একাধিক ফোন কল রেকর্ড রয়েছে এমন প্রশ্নে বাবু মন্ডল বলেন, তিনি মোকছেদ আলীকে চেনেন না এবং তার সাথে কোনোদিন কোনো কথা হযনি। হয়তো কেউ তার নাম ব্যবহার করে এ ধরনের কথোপকথন করেছেন। আমরাও মোকছেদ আলীকে খুঁজছি, তিনি বলেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে গত কয়েকদিনে একাধিক টেক্সট মেসেজ ও অনেকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, মেসেজের রিপ্লাই দেননি।