বিশ্বনাথ দত্ত বসবাস করছেন ভারতে বেতন পাচ্ছেন বাংলাদেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৭ পিএম, ১৬ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চিকিৎসার নামে প্রায় পাঁচ বছর আগে ভারতে চলে যান পাবনার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত। সেখানেই স্ব-পরিবারে বসবাস করছেন তিনি। অথচ সেখানে বসেই ভোগ করছেন কলেজর বেতন-ভাতাসহ অনান্য সুযোগ সুবিধা।
অভিযোগ রয়েছে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস ও বিশ্বনাথের ভাই সুনিল দত্ত পরস্পর যোগসাজশে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সবকিছু জেনেও এ বিষয়ে চুপ রয়েছেন।
এদিকে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও দুদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল মন্নাফ সরকার। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত রোববার (১৪ আগস্ট) কলেজে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। এ সময় অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে টিমটি। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরিফ সাদেক বলেন, ‘পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, মনোয়ার হোসেন, ফেরদৌস রায়হান বকসী ও মোক্তার হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে কলেজটিতে রক্ষিত বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়টি এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন শিগগিরই কমিশনে দাখিল করা হবে।’
অধ্যাপক আব্দুল মন্নাফ সরকারের দেওয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের গণিতের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত। তিনি ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগ দেন। এমপিওভুক্ত হন ১৯৯৩ সালে। পাঁচ বছর আগে স্ব-পরিবারের ভারতের কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করছেন। অসুস্থতার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে অনুপস্থিত তিনি। মাঝে মধ্যে দেশে এসে কলেজের কাগজপত্রে সই করে আবারো ভারতে চলে যান তিনি। এরই মধ্যে গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি বিনা ছুটিতে অবস্থান করছেন ভারতে। অথচ কলেজ থেকে প্রতি মাসের বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা ভোগ করছেন তিনি।
অধ্যাপক আব্দুল মন্নাফ সরকার বলেন, ‘কলেজ অধ্যক্ষের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্বনাথ দত্তের এমন জালিয়াতি একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিষয়টি বিভিন্ন সভায় জানানো হলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম অনিয়মতান্ত্রিকভাবে টানা তিন বছর ধরে দায়িত্বে রয়েছেন। এসব অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এদিকে, প্রতি মাসে বেতন-ভাতার টাকা শিক্ষক বিশ্বনাথ দত্তের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন সোনালী ব্যাংক বেড়া শাখার প্রধান কর্মকর্তা শমিত সরকার। তিনি এর বেশিকিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বলেন, ‘দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সময় বিশ্বনাথ দত্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে ছুটির আবেদন করেন। কলেজের পরিচলনা পর্ষদ তাকে ছুটি দেন। পরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তিনি আবারও ছুটির আবেদন করেন। পরে মানবিক দিক বিবেচনা করে স্ববেতনে তার ছুটি মঞ্জুর করেন পরিচালনা পর্ষদ। তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য যান, ওষুধপত্র নিয়ে আবার আসেন। এভাবেই চলছে। এখানে আমার কোনো দায় নেই।’
এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল আজিজ খান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কলেজের নতুন সভাপতি হয়েছি। বিশ্বনাথ দত্ত অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটি নিয়ে ভারতে থাকেন বলে শুনেছি। কলেজে তিন চারটি মিটিং করা হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আমার একবারও দেখা হয়নি।’
তার স্বাক্ষরে বেতন হয়, তাহলে জানেন না কেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমাকে ভুল বুঝিয়ে সই নিতে পারেন। বিশ্বনাথ দত্তকে কলেজে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশে আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী বলেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ৮ আগস্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্ততে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনীল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।