তারেক রহমানের ১৪তম কারামুক্তি দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০০ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আজ ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি, নন্দিত জননেতা তারেক রহমানের ১৪তম কারামুক্তি দিবস। সেনাসমর্থিত সরকারের নির্দেশে যৌথবাহিনী ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোররাতে তারেক রহমানকে দেশের কোথাও কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন রিমান্ডে নির্যাতন ও টানা ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর সরকারের সাজানো সবকটি মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের এইদিনে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মুক্তি পান।
দেশি-বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহিংসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনে জননেতা তারেক রহমান মুক্তির পরও হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় এ তরুণ নেতার জীবন এখনও বিপন্ন। এখনও বিদেশে সেই নির্মম নির্যাতনের ক্ষত সারাতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গ্রেফতারের ১৪ বছর পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কথিত ১/১১’র মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ভোর রাতে কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিতর্কিত সেনাসমর্থিত সরকারের নির্দেশে জরুরি বিধিমালায় গ্রেফতার করা হয় সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক তারেক রহমানকে। গ্রেফতারের পরদিন কাফরুল থানায় পুলিশ একটি জিডি ও গুলশান থানায় করা হয় চাঁদা দাবির মামলা। সেনাসমর্থিত সরকার ও পরবর্তীতে বর্তমান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করে শতাধিক সৃজনকৃত মামলা। গ্রেফতারেরর আগে, পরে ও এখনো গোয়েবলসীয় কায়দায় তাঁর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, তিনি দুর্নীতির প্রতীক, হাওয়া ভবন দুর্নীতির আখড়া, জঙ্গি মদতদাতা আরো কত মিথ্যাচারের কল্পকাহিনী ছড়িয়ে তাঁর চরিত্র হনন ও ইমেজে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়।
এদিকে মুদ্রা পাচারের মিথ্যা অভিযোগে দুদকে দায়ের করা একটি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেলেও হাইকোর্ট তাঁকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়। নিম্ন আদালতের যে বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি আজ নির্বাসিত। এমনকি দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাও আজ নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেন নিম্ন আদালত থেকে তারেক রহমান খালাস পেলেও সরকারের ইচ্ছায় তাঁকে রাজনীতি থেকে সরাতে এই সাজা দেয়া হয়েছে। বস্তুত ১/১১’র ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেট হন তারেক রহমান। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ও বর্তমান সরকারের প্রায় ১২ বছরে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফোর্স, দুদকসহ সকল সংস্থাই দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদা দাবি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। সে সময় পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতন ও তাঁকে চাপে রাখতে গ্রেফতার করা হয় তাঁর মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভাই আরাফাত রহমানকে। তাঁকে দেশ ছাড়তে প্রচন্ড চাপ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি মায়ের মতোই রাজি হননি দেশ ছাড়তে। ফলে বিপথগামী সেনা কর্মকর্তারা তারেক রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছিল। তাঁর শরীর অসংখ্য জখমে ভরে দেয়া হয় রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে। তাঁকে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। মেরুদন্ডে আঘাত করে মেরুদন্ড ভেঙে ফেলে দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। সেনা কর্মকর্তা ও সরকারের উপদেষ্টারা বিকৃতভাবে তাঁকে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু দেশবাসীর দোয়ায় তিনি স্রেফ বেঁচে যান। রিমান্ডে সীমাহীন বর্বরোচিত নির্যাতন, হাসপাতালে ভর্তি, প্রিয় নানীকে হারানো, মা ও একমাত্র ভাইয়ের কারাবরণ ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে কারাগার ও হাসপাতালের প্রিজন সেলে এক বছর ৫ মাস ২৯ দিন কাটান তিনি। এখনও বিদেশে সেই নির্মম নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। গ্রেফতারের পর থেকে তারেক রহমানের প্রতি সরকারের আচরণ ও মামলাগুলো পর্যালোচনা করলেই দেখা যায়, কত নিষ্ঠুরভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একজন নেতাকে মিথ্যা কালিমা লেপন করে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল। গ্রেফতারের পরদিন ৮ মার্চ কাফরুল থানার ওসি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক জিডিতে উল্লেখ করেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিজে ও দলীয় নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধব ব্যবসায়িক পার্টনারদের দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদেশি টেন্ডার ক্রয়, বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিশন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তাঁর নিজ ও আত্মীয়স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমার প্রাথমিক প্রমাণাদি আছে। জরুরি অবস্থাকালীন সরকারের সকল সংস্থার সহায়তায় তদন্ত শেষে দুদক ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে ব্যাংক স্থিতি হিসেবে ঢাকা ব্যাংকের একাউন্টে ২৮ হাজার ১৬২ টাকা ও এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬ হাজার ২৯০ টাকার সন্ধান পায়। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার থেকে পাওয়া ঢাকা ও বগুড়ায় কিছু জমি পায়। এর বাইরে আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল কাফরুল থানায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা জিডির বিষয়ে ওসির ক্ষমা প্রার্থনা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে জিডিটি নথিভুক্ত করা হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় দৈনিক দিনকাল সংক্রান্ত মামলা থেকেও। গ্রেফতারের ১৬ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন চৌধুরী মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর তারেক রহমানকে পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাত লোকদের হেফাজতে নিয়ে চোখ বেঁধে বর্বরোচিত কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে পরে তিনি আদালতকে অবহিত করেন। জরুরি অবস্থাকালীনই মামলার বাদী আমিন উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলন এবং স্ট্যাম্পে হলফনামায় দাবি করেন এক বিভীষিকাময় মুহূর্তে যৌথ বাহিনী তাঁকে আটকিয়ে রেখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তারেক রহমান তার নিকট কোনো সময়ে চাঁদা দাবি করেননি বা তিনি কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেননি। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহিংসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে তারেক রহমানের ওপর যে ধরনের নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছিল তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। তারেক রহমানের ওপর এক লে: কর্নেল নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল বলে অবশেষে স্বীকার করেছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মূল কুশীলব জেনারেল মইন। গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ড ও কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে একটানা ৫৫৪ দিন বা ১৮ মাস কারাবাসের পর ১২টি মামলায় জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান। মুক্তির পরও হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আদালতের নির্দেশে সেখান থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যান লন্ডনে। এখনো সেখানে সেই ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা করছেন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আদালতের আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি পান মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মুক্তির পর সংসদ ভবনের কারাগার থেকে তিনি পিজি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন নির্যাতন-নিপীড়নে প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী এক তারেক রহমানকে। অথচ গ্রেফতারের আগে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুস্থ তারেক রহমান হেঁটে উঠেছিলেন পুলিশের গাড়িতে। পিজি হাসপাতালে সেদিন মা-ছেলের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। বর্তমান সরকারও ১/১১’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে কীভাবে তারেক রহমানকে ফাঁসানো যায়, তাঁকে কীভাবে রাজনীতিতে আসতে না দেয়া যায় সে কৌশল নিয়েই মরিয়া। মামলা ও ঘৃণ্য অপপ্রচার এখনও চলছে সমানতালে। তারেক রহমানকেই যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভয়। কারণ তারা দেখেছে তারেক রহমানের সক্ষমতা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্য রূপকার ছিলেন তারেক রহমান। এরপর গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে তৃণমূল সমাবেশ করে তিনি যেভাবে দেশের মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সেটা উপলব্ধি করেছে। তারা উপলব্ধি করেছে তারেক রহমানকে থামাতে না পারলে আগামী দিনের রাজনীতি তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তারেক রহমানের মাঝে শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা। সেজন্যই তারেক রহমানকে রুখে দিতেই সরকারের সব সংস্থা ব্যস্ত। লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য যাতে বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ না করা হয় আদালতের মাধ্যমে তাঁর বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সরকারের সকল ষড়যন্ত্রের পরও বাংলাদেশের মানুষ আশাবাদী। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন হয়তো আসবে, মানুষের ভালোবাসার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার আবারও তারেক রহমানকে এ মাটিতে অভিবাদন জানাবে। মানুষ চাচ্ছে, সুস্থ হয়ে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। সেদিনের প্রতীক্ষায় যেন বাংলাদেশ।