করোনা কূটনীতিতে ব্যর্থ সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:২৫ এএম, ২৫ জুন,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিশ্বের প্রায় সব দেশে করোনার টিকা প্রাপ্তি থাকলেও শুধুমাত্র ভারতের সাথে চুক্তি করায় টিকা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চীন-রাশিয়া থেকেও এখনও টিকা পাওয়া নিশ্চিত করতে পারেনি। এখন পযর্ন্ত প্রাপ্ত টিকা প্রায় সবই উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুধু টিকা নয় পিপিই, ফেসমাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, উচ্চমূল্য নিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি কলঙ্কিত ঘটনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বড় পন্ডিতরা টিকার নামে মুলা দেখিয়ে যাচ্ছে। জি-৭ দেশগুলো কিছুদিন আগে বৈঠক করে বলেছে, তারা ১০০ কোটি ডোজ টিকা দরিদ্র দেশগুলোকে দেবে। এ নিয়ে শুধু গল্পই শুনছি। কিন্তু দেওয়ার জন্য কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে সবাই। আমি বলি মুলা দেখাচ্ছে সবাই। সবচেয়ে বড় সমাধান হবে যখন আমরা নিজেরাই টিকা তৈরি করব। নিজেরা টিকা তৈরি করলে আর অন্যের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো টিকা নিয়ে বসে রয়েছে। তাদের যত জনসংখ্যা, তার থেকে তাদের কাছে টিকা বেশি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। সকলের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে না পারায় জনগণকে চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার শুধু নিজেদের দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আমদানিতে সরকার ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যর্থতা, দুর্নীতিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া, একটি উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজে আমদানি না করে তাদের পছন্দমতো চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সংগ্রহ করায় এবং দেড় কোটি ভ্যাকসিনের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে। ভারত সরকারের রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, টিকা কূটনীতিতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে ‘দান’ আর ‘উপহারের’ টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘তৃপ্তির ঢেকুর’ তুললেও এ দিয়ে করোনা মহামারি মোকাবিলা সম্ভব হবে না। বিশ্বের উন্নত ও অনুন্নত অনেক দেশ ইতিমধ্যেই রোডম্যাপ অনুযায়ী গণটিকা কর্মসূচি শুরু করেছে। ওই সব দেশের মানুষ জানে, কখন তাদের টিকাদান কর্মসূচি শেষ হবে। কিন্তু আমাদের দেশের কেউই জানে না, কখন আমরা গণটিকা শুরু করতে পারব। মানুষ করোনার টিকা পাওয়ার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা জানতে চায়।
তিনি সংসদে বলেন, প্রতিদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সাফল্য নেই। টিকা কূটনীতিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে উপহারের ৫-১০ লাখ টিকা পেয়ে স্বস্তির ঢেকুর তুলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অথচ ১৮ কোটি মানুষের টিকা পাওয়ার বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সরকারের ঘোষণায় বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। আমাদের মতো জনবহুল দেশে উপহার আর দানের সংগৃহীত অপর্যাপ্ত টিকা দিয়ে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলা সম্ভব নয়। টিকা আমদানির জন্য বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা না করাটা বড় ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘অদূরদর্শিতার কারণে টিকা ক্রয়ে বিকল্প কোনো সোর্স রাখেনি সরকার। অথচ গত বছর বারবার সরকারকে টিকা ক্রয়ে বিকল্প সোর্স রাখতে পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। বাজেটেও টিকার জন্য স্পষ্ট বরাদ্দ নেই। তবে বাজেট বক্তৃতায় কিছু দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও ভ্যাকসিন ক্রয়ের অর্থপ্রাপ্তির আশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি এখনো সে পর্যায়ে আছে। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মেগা কমিশনের জন্য। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করোনার টিকা আমদানি করা হয়েছে। লুটপাটের জন্যই দেশের মানুষ এখনো করোনার টিকা পাচ্ছে না।