বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০২ পিএম, ২৫ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বর্তমান রাষ্ট্রপতি ‘নিরপেক্ষভাবে’ দায়িত্ব পালন করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে আজ বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল দিয়েছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কোন রাষ্ট্রপতি? যে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই সেই রাষ্ট্রপতি।”
‘‘আমরা রাষ্ট্রপতির আসনটাকে খুব সন্মান করি। যেই থাক, যে হোক, যে দলের হোক রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। শিরোধার্য। এই রাষ্ট্রপতি কি তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন? তিনি কি আওয়ামী লীগের অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটা কাজ করতে পারেন? তিনি কি নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন? তিনি কি একটা আইন পরিবর্তন করতে পারেন? পারেন না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সেই কারণে আমরা আমাদের ২৭ দফার মধ্যে পরিস্কার করে বলেছি যে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। আমরা বলেছি খুব পরিস্কার করে আমাদের ২৭ দফার মধ্যে যে, আমরা দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট করতে চাই। যার মাধ্যমে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চেক এন্ড ব্যালেন্স এনে জনগণের সত্যিকার অর্থে বিষয় গুলো উঠে আসে।”
‘‘আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছি। এটার মধ্যে প্রথম দাবি হচ্ছে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। দাবি দিয়েছি কি? এই সংসদ বিলুপ্ত করে একটা নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সেই নির্বাচন কমিশন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা নতুন নির্বাচন করবেন যে নির্বাচনে সমস্ত দল অংশগ্রহণ করবে, জনগণ নিজের ভোট নিজে দেবে এবং জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে তাহলেই হবে এদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন।”
‘কর্মসূচি : ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের চলমান আন্দোলন চলতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে না যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের বন্দি ভাইদের মুক্ত করতে পারছি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, রুহুল কবির রিজভী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ অগণিত নেতাদের মুক্ত করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
‘‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমনপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, বিদ্যুৎ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র হত্যা আওয়ামী লীগ করেছে। প্রতিবার প্রতিক্ষণে প্রতিদিন তারা হত্যা করে চলেছে এবং আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে ফেলেছে। তাই এই আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরাতে হবে।”
‘‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। প্রতিটি আন্দোলন আমাদের সফল হচ্ছে। আমরা প্রতিটি কর্মসূচিতে জনগণ আরো বেশি করে আসছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমাদেরকে অবশ্যই আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই সফল হবে হবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে জয়ী হতে হবে। ইনশাল্লাহ সব কিছুকে অতিক্রম করে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে আমরা আগামী দিনে জনগণকে মুক্ত করব, দেশকে মুক্ত করব, অবশ্যই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে ’২৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের আয়োজনে। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি মহানগরে একযোগে এই কর্মসূচি হয়।
১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার তৃতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
‘এদের যেতে হবে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘এদেরকে(আওয়ামী লীগ) যেতে হবে। এদের সময় হয়ে গেছে, এবার এদের যেতে হবে। যারা আমরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, যারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে ভাইদের হত্যা করেছে, যারা আমাদের ভাইদের গুম করেছে, যারা আমাদের ছেলেদের আহত করেছে, কারাগারে নিয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই যেতে হবে।”
‘‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না, তারা নিজেদের বিশ্বাস করে। তারা মনে করে এদেশটা তাদের পৈত্রিক সম্পদ করে, তারা মনে করে দেশের মানুষ তাদের প্রজা। সেভাবে তারা লুট।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই সরকার আজকে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আজকে গরীব মানুষ আধাপেটা খাচ্ছে অথবা খেতে পারছে না। মধ্যবিত্ত গরীব হয়ে যাচ্ছে। এই দিন আমরা স্মরণ করছি, গণতন্ত্র হত্যা দিবস সেদিনকে মনে করে আমরা বলতে চাই যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী, যেখানে বিএনপি সেখানেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকারী।”
‘‘আজকে আমাদের নেতা-কর্মী সকলকে শপথ নিতে হবে এই দিনে-আগামী দিনে এদেশের সকল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এই সরকারকে বিদায় করা না হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে না, এদেশের অর্থনীতি মেরামত হবে না, এদেশে আইনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই এদিনে আমরা শপথ নিতে চাই আগামী দিনে আন্দেোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ১০ দফা আদায় করে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।’’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শেখ রবিউল আলম রবি, মহানগরের ইশরাক হোসেন, তাবিথ আউয়াল, নবী উল্লাহ নবী, যুব দলের মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, শাহজাদা মিয়া, মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, নিলোফার চৌধুরী মনি, সাইফুল আলম নিরব, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।