বৈষম্যহীন-গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়
শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বীর শহীদদের স্মরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:১৩ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মহান বিজয় দিবসে ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দেশের জন্য আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসার এদিন উদযাপনে রাজধানীসহ সারা দেশেই দিনভর ছিল নানা আয়োজন। রাজধানীসহ আশপাশের মানুষের জন্য বরাবরের মতো এবারও উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। পৌষের প্রথম সকালে শীত উপেক্ষা করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো মানুষ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের বিজয় দিবসে ছিল ভিন্ন আমেজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বিজয় দিবসের এসব কর্মসূচিতে বীর শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমায় বলীয়ান হয়ে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
ভোরের আলো ফুটতেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশে সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা। সকাল ৭টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের অন্য বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামÐলী, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দেশি-বিদেশি ক‚টনীতিকরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিকে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাদের আগমন ঘিরে স্মৃতিসৌধের চারপাশে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। তারা চলে যেতেই হাজারো মানুষের স্রোত ঢুকে পড়ে স্মৃতিসৌধে। মুহূর্তে যেন বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। নারীদের কেউ এসেছিলেন লাল-সবুজ শাড়িতে সেজে, পুরুষদের কেউ কেউ পরেছেন পাঞ্জাবি। লাল-সবুজের আধিক্য ছিল শিশুদের পোশাকেও। জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের। শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় পার্টি-জাপা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, গণ-অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাগপা, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল। শ্রদ্ধা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সাভার স্মৃতিসৌধে বিএনপি শ্রদ্ধা : বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যগণসহ নেতা-কর্মীরা সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। পরে সেখানে নেতা-কর্মীদের প্রচন্ড ভিড়ে বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত সাভার সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাভারের কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি মহাসচিবের শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করার কথা ছিলো।
শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটা শুনি নাই আপনার মুখেই যেটা জানলাম.. উনি যেটা বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। নির্বাচনে যারা পার্টিসিপেট করবে, যারা অংশীজন তারা যদি চায় তিনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন.. সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এর বাইরে কোনো কথা কারো নাই। আর সংস্কার একটা বিষয় এটা যুগ যুগ ধরে চলবে, এটা নতুন কিছু না। এটা হঠাৎ করে এটা একটা প্যাকেট না, একটা প্যাকেটে করে এনে আমি সংস্কার হয়ে গেলাম। এটা সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি, এই সরকার দ্রæততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে এটাই আমাদের কাম্য। আব্বাস বলেন, আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। মির্জা আব্বাস বলেন, আমার এই জায়গায় আজকে আমাদের প্রিয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা বলার কথা ছিলো। উনি আজকে নাই। কারণ উনি এই মুহূর্তে অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি আছেন সাভার কেন্টনমেন্টে। আমরা তার আরোগ্য কামনা করছি যত দ্রæত সম্ভব তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
বিজয় দিবসে বিএনপির প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, এই বিজয় দিবসে আজকে যে জনগণের ঢল.. আমি এতো বছর আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে এই যাবতকাল, সেই আমাদের বিজয় স্তম্ভ জাতীয় স্মৃতি সৌধ সাভারে গেছি, এই মাজারে (জিয়াউর রহমানের মাজার) এসেছি বহুবার কিন্তু আজকের মতো এরকম জনগণের ঢল আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি। এর একটাই মাত্র কারণ জনগণের বাধভাঙা উল্লাস। এদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এদেশের মানুষ চায় এক স্বৈরাচার মুক্ত করে আমরা জনগণ যেন আর কোনো স্বৈরাচারের হাতে না পড়ি।
মির্জা আব্বাস বলেন, এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার চায়। আমরা শুনেছি, আমরা দেখেছি, ভোটের কথা বললে, ইলেকশনের কথা বললে অনেকের মুখ বাঁকা হয়ে যায়। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার বলেছেন, আমাদেরকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে এটা একটু আমাদেরকে জানিয়ে দিন। আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি, সংস্কার হবে, অপেক্ষা করব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এভাবে চলতে পারে না। আজকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের, মানুষ আজকে বাঁচার আশ্রয় খুঁজছে। মানুষ কথা বলতে পারছে ঠিকই কিন্তু দেশের মানুষের অভাবের তাড়না রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। আমরা চাই, এই সরকার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।
মির্জা আব্বাস বলেন, একজন উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে বলেছেন, আমি তার জবাব দিতে চাই না। তিনি বলেছেন ৫৩ বছর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি করেছেন? আমি বলতে চাই, আপনি রাজনীতি করেন নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটু দয়া করে সম্মান নিয়ে কথা বলবেন। একজন রাজনীতিক একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছেন এরা একদিনে তৈরি হয় নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যা বলেন তাদের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন, মানার চেষ্টা করেন। এই কথা ভাববেন না যে, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করি। ক্ষমতায় যাওয়ার কথা আমরা কখনো বলি না, আজো বলি নাই, কখনো বলব না। আমরা চাই, জনগণের ভোটের অধিকার, আমরা চাই, জনগণের শাসন। বিজয় দিবস উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আজকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেশের মানুষ দেশের জনগণকে এ বিজয় উসব পালন করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়। এ সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নীরব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা শিক্ষার্থী তাহমিনা বলেন, আমরা সপরিবারে এসেছি। যাদের জীবনের বিনিময়ে দেশে স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। আরেক শিক্ষার্থী মাহবুব বলেন, আমরা দেশ স্বাধীন হতে দেখিনি। তবে যারা দেশকে স্বাধীন করেছেন তাদের আত্মত্যাগের কথা আমরা জেনেছি। আমরা নতুন প্রজন্ম তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আগতরা বলেন, ’৭১-এর যুদ্ধের পর ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সবার জন্য তাদের শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবসার বহিঃপ্রকাশ করতেই এখানে আসা। এ সময় তারা বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিজয় দিবসে সরকারি ছুটির দিনে দেশের সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোয় করা হয় আলোকসজ্জা। সাজানো হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ। এছাড়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী হয় বিজয় মেলা। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বিজয় দিবসে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সবার আগে বাংলাদেশ কনসার্ট : পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ রূপ নিয়েছিল এক জনসমুদ্রে। দেশের জনপ্রিয় সব শিল্পীদের গানে গানে মেতে উঠেছিল পুরো রাজধানীবাসী। মহান বিজয় দিবসের দিনে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনসার্টে দুপুর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত সংগীতের এক মহামিলন বসে। গানের পাশাপাশি গণ-অভুত্থ্যানের পর নতুন এক বাংলাদেশে অন্যরকম এক বিজয়োৎসব উদযাপিত হওয়ার বিষয়টিও বারবার উঠে আসে এই কনসার্টে। ব্যক্ত করা হয় নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয়। সবার জন্য উন্মুক্ত এই কনসার্টটির আয়োজন করে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন। আয়োজক সংগঠনটির আহŸায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন এ কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন। সোমবার দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে এ কনসার্ট শুরু হয়। শুরুর দিকে শিল্পী নাসির খান পরিবেশন করেন ‘তুমি ভালোবাসা যদি নাই দাও’। এ সময় তিনি গানের ফাঁকে বলেন, অনেক বছর পর এভাবে গান করতে পারলাম। বুক থেকে একটা পাথর সরে গেল। প্রীতম হাসান গেয়ে শোনান ‘সোনার দেওরা’ এবং ‘তুমি কোন শহরের মাইয়্যাগো’ গান দুটি।
এরপর মঞ্চে আসেন ইথুন বাবু, মৌসুমীসহ আরও কয়েকজন শিল্পী। তারা পরিবেশন করেন ‘আমি মেজর জিয়ার কথা বলছি’, ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’সহ বেশ কয়েকটি গান। শিল্পী আলম আরা মিনু পরিবেশন করেন ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’। পরবর্তী সময়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী মনির খান। তিনি পরিবেশন করেন ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে’, ‘প্রেমের তাজমজল’ গান দুটি। প্রতিটি গানেই জনতা মুখ মেলায়। করতালি দিয়ে নিজেদের ভালোলাগার প্রকাশ ঘটায়। শিল্পী কনকচাঁপা পরিবেশন করেন ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ এবং ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’ গান দুটি। বিকালে শিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘দেখা না দিলে বন্ধু’, চিশতি বাউল পরিবেশন করেন ‘বেহায়া হৃদয়’ এবং ‘যদি থাকে নসিবে’ গান দুটি। ইমরান গেয়ে শোনান ‘আমি এমন একটা তুমি চাই’। কণা পরিবেশন করেন ‘ওহে শ্যাম’ এবং ‘দুষ্টু কোকিল ডাকে রে’ গান দুটি। সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ডিফরেন্ট টাচ। তারা পরিবেশন করে তাদের জনপ্রিয় দুই গান ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ এবং ‘মন কী যে চায় বলো’। এরপর মঞ্চে গান নিয়ে আসেন শিল্পী জেফার। পরে ব্যান্ডদল শিরোনামহীন গেয়ে শোনায় বদ্ধ জানালা, এই অবেলায়সহ আরেকটি গান। পরে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড সোলস গেয়ে শোনায় তাদের জনপ্রিয় দুই গান ‘বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি’ এবং ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’। পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ তাদের সঙ্গে গলা মেলায় দুটি গানেই।
বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডবিøউটিসির ঘাটে, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এছাড়া দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং সিনেমা হলে করা হয় বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানোর ব্যবস্থা।
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের সংগ্রাম ও বিজয় স্মরণে র্যালি করেছেন ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ আয়োজন করে। দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিজয় র্যালি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-শাহবাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় র্যালি। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ভোরে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষে বিজিবি সদর দফতরসহ বাহিনীর সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটগুলোতে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ স্মৃতিসৌধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ স্মৃতিসৌধে শহিদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪-এর বীর শহিদদের স্মরণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ছবি প্রদর্শনী, ভিডিও ডকুমেন্টেশন ও শহিদি স্মৃতিকথায় ‘বিজয়ের লাল জুলাই’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রাইজমানি বিতরণ করা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
মহান বিজয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি ডিআরইউর শ্রদ্ধা : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সোমবার সকালে সংগঠনের সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের নেতৃত্বে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় ডিআরইউর সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, অর্থ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন, দফতর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক রোজিনা রোজী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এমদাদুল হক খান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ) ও কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ জুনায়েদ হোসাইন (জুনায়েদ শিশির), আকতারুজ্জামান, আমিনুল হক ভ‚ঁইয়া, মোঃ সলিম উল্ল্যা (এস. ইউ সেলিম), ডিআরইউ সদস্য কামরুজ্জামান খান, আসাদুজ্জামান বিকু, আয়াতুল্লাহ আকতার, মো: আবু সায়েম ভ‚ঁইয়া ও মোহাঃ আব্দুল লতিফ রানাসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।