রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে : এম সাখাওয়াত হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩৬ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:১৫ পিএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশ্যই রোডম্যাপ দেবে। ইতিমধ্যে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে এবং সেখানেও আলোচনার মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-মানবাধিকার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
পুলিশ কমিশন গঠন নিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কমিশন গঠনে আমি অনেক দৃঢ় অবস্থানে আছি। পুলিশের অস্ত্র কী করে সাধারণ পোশাকের মানুষের হাতে গেল? তা নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।’
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় যায়, তারা সেই ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখে। পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট নিয়ে কাজ করা হবে।’
সিজিএস-এর চেয়ার মুনিরা খান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে মানবাধিকার কমিশন নতুন নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছতা ধরে রেখে খুব একটা কাজ করেছে বলে আমরা দেখতে পাইনি। কীভাবে কাজ করলে, কী করলে আমরা স্বৈরাচারের হাতে পড়বো না, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
সংস্কারের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে উল্লেখ করেন তিনি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)-এর নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, ‘আমাদের ঘুরে ফিরে দিন শেষে আমাদের রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ফেরত যেতে হবে। মানবাধিকার কমিশন গঠনে কার্যকারিতায় কোনো স্বচ্ছতা নেই। পনেরো বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ হলো এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলন। নিকট অতীত নিয়ে আলোচনা করা হয়, পূর্বের কথা বলি না। সরকারের উচিত যে স্থাপনাগুলোতে মানুষকে গুম করে রাখা হতো যেমন-আয়না ঘর, টর্চার সেল সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।’
বিগত ১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময়ে যারা তদন্তে ছিলেন তাদেরকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘আইনের সংস্কারে কাজ করতে গেলে অনেকগুলো বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। পুলিশ কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিশন গঠন না হলে নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দলীয় বিচারক, দলীয় বিচারপতি তথা দলীয়করণ থেকে বের না হয়ে আসলে কোনো লাভ নেই। আইন আছে কিন্তু তার কোনো প্রয়োগ নেই।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে আমলাদের নিয়ে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনে আইনজীবী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো প্রতিনিধি ছিল না। যে প্রতিষ্ঠান অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকবে, সেই প্রতিষ্ঠান তদন্ত করতে পারবে না। স্বাধীন তদন্ত সংস্থা থাকা প্রয়োজন।’
বিগত সরকারের সময়ের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘সংঘবদ্ধভাবে অন্যায় সংঘটিত হয়েছে, সরকারের আজ্ঞাবহদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’
মানবিকতা মানবাধিকারের মূল বিষয় উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার সময় আইনের প্রয়োগ নিয়ে কথা বলি। তবে মানবাধিকারের মূল বিষয় হলো মানবিকতা। মানবাধিকার কমিশন বা অন্যান্য সংস্থাগুলো তৈরি করা হয়েছে সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে। স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করতে না পারলে আজ্ঞাবহ হয়েই থাকতে হবে এই সংস্থাগুলোকে।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে আজকের এই আলোচনার প্রয়োজন হতো না। সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই? সেই আলোচনা করা প্রয়োজন। আইন, বিচার ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রয়োজন। সংস্কারের সময় সাংস্কৃতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন। তা না হলে মব জাস্টিস আরও বাড়বে।’
গণফোরাম-এর কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদেরও অনেক আশা ছিল। কমিশন আগেও ছিল। কিন্তু সেখানে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পরও আশা বেঁধেছিলাম আমরা, ফল পাইনি। রাষ্ট্রের চরিত্র বদলাতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কারে তরুণদের সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ করতে হবে। ছাত্রদের যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ব্যবহার না করা যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ।’
মানবাধিকার কমিশনের কাছে প্রশ্ন রেখে ‘মায়ের ডাক’-এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে পারছি, এই পরিবর্তন শুধু দেখতে পাচ্ছি। বিগত ১২ বছরে জাতীয় আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যখন সরকার বার বার বলছিল, বাংলাদেশে গুম বলে কিছু নেই, তখন মানবাধিকার কমিশনের কাজ কী ছিল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ তারা করেনি।’
সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া, এবি পার্টি’র যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, কাপেং ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, নারী অধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান, ট্রান্স নারী অধিকার কর্মী জয়া শিকদার, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নাইমা আক্তার রীতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তৌহিদ সিয়াম ও জি নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ।
দিনকাল/এসএস