নির্বাচন কমিশনে নিয়োগে আইন করার দাবি সুজনের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১১ এএম, ১১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সংবিধানে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগে আইনটি প্রণয়ন করা অতীব জরুরি বলে মনে করেন সুজনের নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করেন, আমাদের সংবিধানে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এর কারণ হলো আমাদের রাজনীতিবিদরা কোনো বিধিনিষেধের আওতায় আসতে চান না। আমরা আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আইনের খসড়াটি তুলে দিব।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক কতৃক প্রণীত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ শিরোনামে আইনের চূড়ান্ত খসড়া সকলের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপনের জন্য আজ বুধবার, অনলাইনে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা এসব কথা বলেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। খসড়াটি পাঠ করে শোনান সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়া সুজন-এর নির্বাহী সদস্যগণের মধ্যে অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, সুজন সহ-স¤পাদক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এবং রংপুর জেলা সভাপতি আকবর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের সংবিধানে আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এর কারণ হলো আমাদের রাজনীতিবিদরা কোনো বিধিনিষেধের আওতায় আসতে চান না। আমরা মনে করি আইনটি প্রণয়ন করা অতীব জরুরি। এর মাধ্যমে সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তির কমিশনে নিয়োগ লাভের সম্ভাবনা তৈরি হবে। উত্থাপিত আইনের খসড়াটিতে অনুসন্ধান কমিটি গঠন, কমিশনারগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, কমিটির কাজের স্বচ্ছতা, কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা- এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগিরই আমরা আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আইনের খসড়াটি তুলে দিব।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সুজন-এর পক্ষ ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ শিরোনামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীল নাগরিকদের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে গত ৪ অক্টোবর সংগঠনটির উদ্যোগে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সংশি¬ষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত খসড়া সবার সামনে উপস্থাপনের জন্যই আজকের আয়োজন।
শাহদীন মালিক বলেন, খসড়ার মূল কথা হলো একটা অনুসন্ধান কমিটি থাকবে এবং কী পন্থায় সেই কমিটি কাজ করবে। আইন না থাকলে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ অনেক বেশি থাকে, আইন থাকলেও যে স্বেচ্ছাচারিতা হয় না তা না কিন্তু সেই সুযোগটা সীমিত হয়। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত হলে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উবে যায়। আইনমন্ত্রী বলছেন আইন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নাই, আমারা ওনার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করি। এই সময়ের মধ্যে আইন যে প্রণয়ন করা সম্ভব সেটা দেখানোর জন্যই এই খসড়া উপস্থাপন। দেড় মাসের মধ্যে সংসদের মাধ্যমে এই আইন প্রণয়ন হতে পারে, আর সেটি না হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে হতে পারে। আইন প্রণয়ন না করে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করলে তা সংবিধানসম্মত হবে না। সার্চ কমিটির মাধ্যমে জনগণকে বোকা বানাবার একটি পদ্ধতি সরকার বের করেছে। আমরা সবাই চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক, তার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে আগামী নির্বাচন কমিশন আইন করে গঠন করা।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনেকগুলো সংশি¬ষ্ট পক্ষ কাজ করে। কমিশন নির্বাচন পরিচালনার মূল দায়িত্বটা পালন করে। কমিশনের এক্ষেত্রে অগাধ ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে কমিশন চেষ্টা করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার। কমিশনের কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নির্বাচন পরিচালনা করা একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া; নির্বাচন করে এবং করায় সরকারি লোক, আপনি ডান দিকে তাকাবেন বাম দিকে সব শেষ হয়ে যাবে। তাই এটা সফলভাবে পরিচালনার জন্য যোগ্য লোকের দরকার।
জাকির হোসেন বলেন, খসড়া উপস্থাপনের ফলে আইন করার কাজটা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। এখন সরকার এই খসড়াটি বিবেচনায় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে দ্রুতই একটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, আমরা আশা করি দ্রুত প্রণয়ন করবেন কারণ সরকারের ভাবমূর্তির একটি বিষয় আছে। সরকার যে সার্চ কমিটি গঠন করবে তারা যদি শক্ত মেরুদন্ডের মানুষ না হন তাহলে সমস্যা তৈরি হবে।