মরক্কোকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ফ্রান্স
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৩২ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২৫ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ভাগ্যের ফেরে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্নযাত্রা শেষ হয়ে গেল হাকিমি-সোফিয়ানদের। গোলের খেলা ফুটবলে গোলটা বাদে সবই যেন ছিল মরক্কোর দখলে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় ধরে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে মরক্কো। মুহুর্মুহু আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণ কাঁপিয়ে দিলেও তাতে ভাঙ্গন ধরাতে পারেনি আরবীয় যোদ্ধারা। হুগো লরিস যদি না আজ অসাধারণ হয়ে উঠতেন, তবে গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো! বিজয়ী হাসি হয়তো আশরাফ হাকিমিদের ঠোঁটেই শোভা পেত। নামে, ভারে, যশে-খ্যাতিতে, ইতিহাস-ঐতিহ্য পরিসংখ্যান আর র্যাঙ্কিংয়ে, সব বিবেচনায় ফ্রান্স ঢের এগিয়ে থাকলেও ম্যাচে আধিপত্য ছিল মরক্কোর। তবে শেষ পর্যন্ত সেই মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফ্রান্স টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল।
কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১টায় বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স-মরক্কো। প্রথমার্ধের শুরুতেই থিও হার্নান্দেজের গোলে মরক্কোর বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। আর দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে খেলতে নেমে দ্বিতীয় গোলটি করেন কোলো মুয়ানি।
পর্তুগালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মরক্কোর অধিনায়ক রোমেইন সাইস চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছেড়েছিলেন। আজকের শুরুর একাদশেও তাই দেখা যায়নি তার নাম। বিপরীতে ফ্রান্স দলে আসেনি তেমন পরিবর্তন।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপুটে খেলতে শুরু করে ফ্রান্স। গোটা বিশ্বকাপজুড়ে কঠোরভাবে ডিফেন্স সামলে রাখা মরক্কো আজকের ম্যাচে ৫ মিনিটের মাথাতেই হজম করে টুর্নামেন্টের প্রথম গোল। ডান প্রান্ত থেকে মরোক্কান ডিফেন্ডার জাওয়াদ আল ইয়ামিককে ফাঁকি দিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ক্রস বাড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড। প্রথম শটটা মরোক্কান রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের গায়ে লেগে ফেরত আসে এমবাপ্পের কাছে। ফিরতি শট আরেক ডিফেন্ডারে শরীরে লেগে চলে যায় বাঁ পাশে প্রায় ফাঁকায় দাড়ানো থিও এরনান্দেজের কাছে। বাঁ পায়ের দারুণ এক ভলিতে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও জাতীয় দলের জার্সিতে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ফ্রান্স ডিফেন্ডার।
কিছুক্ষণের ভেতরেই গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। মিডফিল্ডার আজেদিন উনাহির ২৫ গজি শট বাঁয়ে ঝাপিয়ে রুখে দেন ফ্রান্স অধিনায়ক উগো লরিস। ১৭তম মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট মরক্কোর। এবার আর লরিসের পরীক্ষা নিতে পারেননি হাকিম জিয়েশ। ডান দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়া চেলসি তারকার শট চলে যায় বাইরে।
ম্যাচের ২১তম মিনিটের মাথায় থিও হার্নান্দেজকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন মরক্কোর মিডফিল্ডার বাউফল। এদিকে ৩৬ মিনিটের মাথায় গোলসংখ্যা বাড়ানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্স। কিন্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি এম্বাপ্পে -জিরুদ। শুয়ামেনির বাড়ানো বল রিসিভ করে ডিক্সের প্রান্ত থেকে শট নেন কিলিয়ান এম্বাপ্পে। কিন্তু দ্রুতই বল ক্লিয়ার করেন আশরাফ হাকিমি। লুজ বল পেয়ে থিও হার্নান্দেজ বল নিজের দখলে নিয়ে নেন। কয়েক সেকেন্ড পর বল বাড়িয়ে দেন সামনে থাকা অলিভিয়ের জিরুদের দিকে। মরক্কোর ডিফেন্সে ফাঁকা জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও তাড়াহুড়ো করে শট নেন জিরুদ। ফলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বারের বা দিক দিয়ে চলে যায় বল।
ম্যাচের ৪৩ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মরক্কোও। কর্ণার থেকে হাকিম জিয়খের বল রিসিভ করে ফ্রান্সের গোলবার লক্ষ্য করে বাইসাইকেল কিকে শট নিয়েছিলেন আল ইয়ামিক। হুগো লরিসের দক্ষতায় প্রায় নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বেঁচে যায় ফ্রান্স। সংযুক্তি সময়ে গিয়ে আবারো মরক্কোর কর্ণার, ঠিক একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা জেগে উঠলেও এবারে কেউ বল পাওয়ার আগেই সামনে এসে লাফিয়ে বল নিজের দু'হাতে বন্দী করেন হুগো লরিস। প্রথমার্ধে দু'দলেরই দুটি শট পোস্টে লাগায় গোলের সুযোগ মিস করে।
পিছিয়ে থাকা মরক্কোর কাউন্টার অ্যাটাক ও সেট পিস থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হওয়ার পরেও গোল না হলেও, দমে যায়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চারটি সাবস্টিটিউট করেন মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। নাসির মাজরাওই, এন নেসেরি ও বাউফলকে উঠিয়ে নেন তিনি। মাঠে নামেন ইয়াহিয়া, হামাদাল্লাহ ও আব্দুলকালাল। পরিবর্তন আসে ফ্রান্সের একাদশেও, অলিভিয়ের জিরুদের পরিবর্তে খেলতে নামেন মার্কাস থুরাম।
দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ খেলতে শুরু করে মরক্কো। শুরুতে অবশ্য আক্রমণে গিয়েছিলছিল ফ্রান্স। বাঁ দিক থেকে বল ভাসিয়েছিলেন গ্রিজম্যান। সেই বল রিসিভ করে শট নেন জুলেস কুন্দে, কিন্তু সেই শট বাইরে চলে যায়। এর কয়েকমিনিট পরে ক্ষণেক্ষণে আক্রমণ হেনে ফ্রান্সের রক্ষণদুর্গ কাঁপিয়ে তোলে মরক্কো। বল নিয়ে ফ্রান্সের ডিবক্সেও বেশ কয়েকবার ঢুকে গিয়েছিলেন হাকিমি-জিয়েখরা। মরক্কোর আক্রমণ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন ফরাসি ডিফেন্ডাররা। তবে কিছুতেই গোলমুখ খুলতে পারেনি অ্যাটলাস লায়নসরা।
এদিকে শেষ দিকে এসে খেলার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন দিদিয়ের দেশম। আক্রমণের ধার বাড়াতে ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় মিডফিল্ডার ওসমান ডেম্বেলের পরিবর্তে তিনি মাঠে নামান সেন্টার ফরোয়ার্ড রান্দাল কোলো মুয়ানিকে। আর এর ফলও দলটি পেয়ে যায় প্রায় সাথেসাথে।
মাঠে নামার ১ মিনিটেরও কম সময়ে গোল করেন এই ফ্রাংকফুর্ট স্ট্রাইকার। ফাইনাল থার্ডে বল পেয়ে যান এম্বাপ্পে। এম্বাপ্পের শটে বল এক মরোক্কান ডিফেন্ডারর গায়ে লাগলে বল পেয়ে যান ডান দিকে থাকা মুয়ানি। ছয় গজ দূর থেকে সোজা এক শট নিয়ে ইয়াসিন বোনোকে বোকা বানিয়ে জালে বল জড়ান তিনি। ফ্রান্সের জার্সিতে এটিই তার প্রথম গোল।
বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের কোনো ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নেমে এত দ্রুত গোল করেছিলেন কেবল একজনই। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৬ সেকেন্ডের মাথায় ডেনমার্কের হয়ে গোল করেছিলেন এ্যাবে সান্ডে। কোলো মুয়ানি গোল করতে সময় নিয়েছেন ৪৪ সেকেন্ড। ফলে ২-০ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ল ফ্রান্স।
এবারের বিশ্বকাপে মরক্কোর রূপকথার গল্পের এখানেই সমাপ্তি ঘটল। বিপরীতে নতুন ইতিহাস রচনা করতে আগামী ১৮ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে ফ্রান্স। মেসিদের সামনে এবার এম্বাপ্পের দল।মরক্কোর বিদায়, দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ফ্রান্স