চলে গেলেন দিয়াগো ম্যারাডোনা শোকের ছায়া ফুটবল ঘোরোনা সহ সকল বিভিন্ন ক্রিয়াঘোরোনায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:২০ এএম, ২৭ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৩১ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
একজন ফুটবল জাদুকর। একজন ধ্রুপদী শিল্পী। একজন কিংবদন্তি। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস এইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্ম ম্যারাডোনার। দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা; ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠেছিল ল্যাতিন আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেক্সিকান রেফারির বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়ে টানা বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ম্যারাডোনার। ফাইনালে হারের পর ম্যারাডোনা যেভাবে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন, তাঁর ওই কান্না হৃদয় ছুঁয়ে গেছে ফুটবলপ্রেমীদের। ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপেও খেলেন তিনি। কিন্তু ড্রাগের জন্য নিষিদ্ধ হন। ফুটবল জাদুকর জাতীয় দলকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান ১৯৯৭ সালে। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে ফুটবল কিংবদন্তি ৯১ ম্যাচে গোল করেন ৩৪টি। চার বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৮টি।
ম্যারাডোনা ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে সুযোগ পান। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাননি। ড্যানিয়েল পাসারেলার নেতৃত্বে সেবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ’৭৮ সালে সুযোগ না পেলেও ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার আকাশী-সাদা জার্সি গায়ে ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে চারটি বিশ্বকাপ খেলেন। ’৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে অভিষেক। ২২ বছর বয়সেই সব ফোকাস টেনে নিয়েছিলেন নিজের দিকে। কিন্তু গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফুটবল বিশ্ব দেখে নতুন এক ফুটবল জাদুকরকে। অমর হয়ে যান ওই আসরে। তাঁর ফুটবল জাদুতে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে। শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়নই নয়, পাঁচটি গোল করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দুটি গোল তাঁকে ইতিহাসের সোনালি পাতায় আলাদা স্থান দিয়েছে। যার একটি গোল ছিল বিতর্কিত। ‘হ্যান্ডস অব গড’ বলে যে গোলটি তিনি করেছিলেন, তা নিয়ে এখনো সমালোচনায় সরব ইংল্যান্ডের ফুটবলপ্রেমীরা। দ্বিতীয় গোলটিকে ফিফা শতাব্দীর সেরা গোল বলে ঘোষণা দিয়েছে। নিজেদের সীমানা থেকে বল ধরে ইংল্যান্ডের পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে যেভাবে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা, তা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব! ওই এক গোলেই অমর হয়ে যান এই ফুটবল শিল্পী। ম্যারাডোনার জাদুকরী ফুটবলের পরপরই বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিশ্বকাপ ফুটবল।
ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে তিনি কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অংশ নেয়। কিন্তু বাজে পারফরম্যান্সের পর তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন। জাতীয় দলের মতো ক্লাব ফুটবলেও তাঁর ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। তিনি খেলেছেন ন্যাপোলি, বার্সেলোনার বিশ্বখ্যাত ক্লাবগুলোতে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন টুইট করেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আমাদের কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আপনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন সবসময়।’
এএফপি জানিয়েছে, আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর তিগ্রেতে নিজ বাড়িতে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন ৬০ বছর বয়স্ক ফুটবল জাদুকর। কিছু দিন আগে অসুস্থ হয়ে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁর মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার করে রক্ত অপসারণ করা হয়। অস্ত্রোপচারের ৮ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে। সেখানেই মারা যান।