আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাংবাদিক রোজিনার গ্রেফতারের খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৪ এএম, ১৯ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩১ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের গ্রেফতারের খবর স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি, ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই সাংবাদিকের প্রতি হেনস্তা ও হয়রানিমূলক গ্রেফতারের খবর।
আজ মঙ্গলবার শাহবাগ থানা থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে তোলা হয় রোজিনা ইসলামকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়ের করা এই মামলায় রোজিনার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর রোজিনাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে শাহবাগ থানায় মামলা রুজু করা হয় রোজিনার নামে। সোমবার রাত থেকেই রোজিনার আটকের খবর আসতে শুরু করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন পোস্টে রোজিনার গ্রেফতারের খবরের শিরোনাম ছিল "Bangladesh arrests journalist known for unearthing graft" ‘অর্থ্যাৎ ‘দুর্নীতি অনিয়মের (সংবাদের) জন্য খ্যাত সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ’। ওয়াশিংটন পোস্টে রোজিনাকে আটকের আইনকে ‘ঔপনিবেশিক যুগের আইন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সংবাদের ভূমিকায় লেখা হয়, দাফতরিক দুর্নীতির শক্তিশালী প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত বাংলাদেশের একজন সাংবাদিককে ঔপনিবেশিক যুগের সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা একটি সম্ভাব্য মৃত্যুদ- পর্যন্ত সাজা বহন করে।
রোজিনাকে নিয়ে প্রায় একই ধরনের শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ভারতীয় দৈনিক দ্যা হিন্দু। পাশাপাশি ভারতের সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ার শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ: সাংবাদিক রোজিনাকে রিমান্ড নেওয়ার পুলিশের আবেদন খারিজ’।
ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপিও তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করে, ‘দুর্নীতি অনিয়মের (সংবাদের) জন্য খ্যাত সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ’।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফর্ম কমিটি ফর ট্যু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ও প্রতিবেদন করে রোজিনার গ্রেফতারের বিষয়ে। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- Bangladeshi authorities arrest journalist Rozina Islam under Official Secrets Act অর্থাৎ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের আওতায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করেছে।
প্রতিবেদনে রোজিনার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ খারিজ করে তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবিও করেছে সংগঠনটি।
রোজিনার মুক্তি দাবি সাংবাদিক অধিকার সংগঠন সিপিজের: অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট- সিপিজে।
সোমবার নিউইয়র্কভিত্তিক এ সংগঠনের এক বিবৃতিতে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার বন্ধ করারও দাবি জানানো হয়েছে।
সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।
রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন উপসচিব।
সচিবালয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সাংবাদিক রোজিনা ইসমলামকে সোমবার রাতে পুলিশে সোপর্দ করা হয়সচিবালয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সাংবাদিক রোজিনা ইসমলামকে সোমবার রাতে পুলিশে সোপর্দ করা হয়রোজিনা ইসলাম ওই অফিস থেকে কোনো নথি সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় তিনি ‘আক্রোশের শিকার’ হয়েছেন বলে তাদের সন্দেহ।
সিপিজের এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক আলিয়া ইফতিখার বলেন “আমরা গভীরভাবে নাড়া খেয়েছি যে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা একজন সাংবাদিককে আটক করে ঔপনিবেশ যুগের নির্মম একটি আইনে অভিযোগ এনেছে, যেখানে হাস্যকরভাবে অত্যন্ত কঠোর শাস্তির বিধান আছে।
“বাংলাদেশের পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষের উচিত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কাজকে ‘জনগণের সেবা’ হিসেবে গণ্য করা এবং শিগগিরই তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিয়ে মুক্তি দেওয়া।”
সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ওসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইমেইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।