ভারতে ২ বাংলাদেশিকে গাড়িচাপায় হত্যা, জামিন পেলেন না রাগিব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:১৩ পিএম, ২০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৯ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
উচ্চ গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুই বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগে আটক কলকাতার বিরিয়ানি ব্যারন বলে পরিচিত আখতার পারভেজের ছেলে রাগিবের জামিন আবেদন সোমবার প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে তার পিতামাতাকে ভর্ৎসনা করেছেন আদালত।
২০১৯ সালের ১৭ই আগস্ট নিজের জাগুয়ার এফ-পেস ঘন্টায় ১৩০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার বেগে চালানোর সময় দুর্ঘটনায় পড়েন রাগিব। এতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। প্রথমে পালিয়ে দুবাই চলে যান রাগিব। এর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দেশে ফিরে পুলিশে আত্মসমর্পণ করেন।
আটক করা হয় রাগিবকে। সোমবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউল এবং হেমান্ত গুপ্তার বেঞ্চে।
সেখানে আখতার পারভেজের আইনজীবী কপিল সিবাল জানান, বাইপোলার অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডারে ভুগছেন রাগিব। তার মানসিক চিকিৎসার খুব বেশি প্রয়োজন। তিনি চার্জশিট দেয়ার বিষয়ে তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। তাকে এক বছর অন্তর্বর্তী জামিনে বাসায় থাকার পর আবার জেলে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না। বিশেষ করে এ সময়ে করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
শুনানিতে বেঞ্চ থেকে কপিল সিবালকে জানিয়ে দেয়া হয়, উচ্চ গতিতে গাড়ি চালানো এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার ঘটনাকে বিবেচনা দিয়ে যাচাই করা যায় না। এ ঘটনায় আরো অভিযুক্ত সঞ্জীব নন্দা।
আদালত জানতে চান, তিনি যদি মানসিকভাবে অসুস্থই হয়ে থাকেন তাহলে কে তাকে অতো উচ্চ গতিতে জাগুয়ার চালানোর অনুমতি দিয়েছিল? এমন ঘটনায় যে অভিভাবক জড়িত তাদেরকে জেলে নেয়া উচিত। আদালত আরো বলেন, ট্রায়াল কোর্টের কাছে কোনোকিছুতেই মনে হয়নি যে, রাগিব মানসিকভাবে অসুস্থ।
আদালতে আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর এই মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আট মাস জেলে ছিলেন রাগিব। গত বছর এপ্রিলে তাকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন যখন করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তখন তাকে আবার কোন যুক্তিতে জেলে পাঠানো হবে? এমন কোনো অভিযোগও নেই যে, তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের এসব বিষয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন।
জবাবে আদালত বলেন, দুর্ঘটনার পর পরই রাগিব পালিয়ে গিয়েছিলেন দুবাই। এমনকি আপনারা ওই গাড়ির চালকও পাল্টে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তিনি যা করেছেন তাতে কোনো রকম পরিত্রাণ পাওয়ার পথ নেই।
আদালতের এ বক্তব্যে আইনজীবী সিবাল বলেন, দুবাই পালিয়ে গেলেও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভারতে ফিরে এসেছেন রাগিব। তিনি তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। দুর্ঘটনার পর কলকাতা পুলিশ তার বড় ভাই আরসালানকে গ্রেপ্তারের পরই দেশে ফিরেছেন রাগিব।
কিন্তু জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত বলেন, রাগিবকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তার মানসিক অবস্থা যাচাইয়ের দায়িত্ব আদালতের। আইনজীবী সিবালের উদ্দেশে বলা হয়, আপনার যুক্তিকে আমরা প্রশংসা করি। তবে তার জামিনের যে আবেদন আপনি করেছেন তার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারিনি। ফলে রাগিবের পিতার আনা জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন আদালত।
এ অবস্থায় আখতার পারভেজ তার আইনজীবী অঙ্কুর চাওলার মাধ্যমে বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষ ৬৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিয়েছে। প্রচুর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
এ ছাড়া প্রচুর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে বাকি আছে। তাই এ অবস্থায় রাগিবকে জেলে পাঠানো হবে এক রকম শাস্তি দেয়া এবং ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার অধীনে জীবনের প্রতি যে মৌলিক অধিকার দেয়া হয়েছে, তার বিপরীত হবে।