মোদি-বিরোধী প্রতিবাদে মৃত্যুর তদন্ত চেয়েছে ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২২ এএম, ৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৩১ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২৬ থেকে ২৮ মার্চ বাংলাদেশে সফরকালে প্রতিবাদ চলাকালে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক, নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র তদন্তের আহবান জানিয়েছে ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। গত বৃহস্পতিবার দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতি দেয়া সংগঠনগুলো হলো- এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বা ফোরাম এশিয়া, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটল পানিসমেন্ট জাস্টিজ প্রজেক্ট (সিভিকাস), মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিয়োস জাস্টিস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভোলানটরি অ্যাগেইনস্ট ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স এবং ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সকলকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ বাতিল করতে হবে।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে বিক্ষোভে অংশ নেয়া লোকদের নির্যাতন ও জোর করে নিখোঁজ করার প্রথাটি শেষ করতে এবং রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ভাগ্য এবং অবস্থান অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। বিবৃতিতে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা ঠিক হবে না।
বিবৃতিতে তথ্যে নিরবচ্ছিন্ন অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে আরোপিত সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেয়ার উপায় হিসাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা থেকে বিরত থাকুন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের আয়োজিত দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে আক্রমণ চালিয়েছিল। এ সময় তারা অনেককে মারধর করেছে এবং শত শত শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারী আহত করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ২০ থেকে ২৬ মার্চ ঢাকার জাতীয় মসজিদে এই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দাবি করে যে, সেখানে বিপুলসংখ্যক লোক যারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদস্য এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জুমার নামাজ শুরুর আগে জাতীয় মসজিদটির চারপাশে জড়ো হয়েছিল।
নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আ’লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা বিক্ষোভ শুরুর চেষ্টা করা মুসল্লিদের ওপর সহিংস হামলা শুরু করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মসজিদ চত্বরে সীমাবদ্ধ ছিল। ভিডিও ফুটেজ অনুসারে হামলাকারীরা বিনা উসকানিতে আক্রমণে হামলা চালাতে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
এর পরপরই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে কমপক্ষে ৬০ জন বিক্ষোভকারী আহত হন এবং অনেকে রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা ২৬, ২৭ এবং ২৮ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এর মধ্যে অনেকগুলো বিক্ষোভে উপস্থিত ছিল, বেশিরভাগ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের মুখোমুখি হয়ে তারা তাদের আক্রমণ করেছিল।
এতে আরও বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমন করতে সারা দেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড মোতায়েন করেছিল, যার ফলে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কমপক্ষে ১৪ জন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। এতে আরও কয়েকজন প্রতিবাদকারী আহত হয়েছেন। অনেকে গুলিতে আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে ২৩, ২৪ এবং ২৫ মার্চ ঢাকা, সিলেট ও রাজশাহীতে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে ১০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র-কর্মীকে গুম ও মামলা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।