ব্রাজিলে করোনা বিপর্যয়, একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু- ২২৮৬
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৬ পিএম, ১১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৫ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ব্রাজিলে নতুন করে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রথমবারের মতো এক দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়েছে।
গতকাল বুধবার (১০ মার্চ) সেখানে মারা গেছেন কমপক্ষে ২২৮৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা আবার হু হু করে বাড়ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়েছে, সব মিলে এ দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৩৭০। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বা ধরনের কারণে এমনটা হচ্ছে।
নতুন স্ট্রেইন অতিমাত্রায় সংক্রামক। তার কারণে সংক্রমণের হার আবার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভা।
করোনা মহামারিকালে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করতে গিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে ‘স্টুপিড’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো এদিন প্রেসিডেন্ট বলসোনারোকে মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখা যায়।
করোনা ভাইরাস মহামারিকালে তিনি অব্যাহতভাবে এর হুমকিকে খাটো করে দেখেছেন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে তিনি জনগণকে ‘ঘেনঘেন’ করা বন্ধ করতে বলেছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে দেশটির সর্ববৃহৎ শহরগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তীব্র চাপে। আইসিইউতে স্থান সংকুলান সঙ্কটে পড়েছে। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। এমনটা সতর্কতা দিয়েছে ব্রাজিলের শীর্ষ স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ফিওক্রুজ ইনস্টিটিউট।
এখানে কর্মরত একজন চিকিৎসক ও গবেষক মারগারেথ ডালকোলমো বলেছেন, করোনা মহামারি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ব্রাজিলে। ২০২১ সালটিও সবচেয়ে কঠিন সময়ের দিকে যাচ্ছে। বুধবার ব্রাজিলে একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৭৬ জনের। একদিনে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা।
নতুন স্ট্রেইনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘পি১’। ধারণা করা হচ্ছে এর উৎস মানাউসের অ্যামাজন শহর। দেশটির মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. পেড্রো হাল্লাল বলেছেন, খুব দ্রুততার সঙ্গে যদি আমরা জনগণকে টিকা দেয়া শুরু না করি, তাহলে একটি ‘ম্যাসিভ ট্রাজেডি’র দিকে এগিয়ে যাবো আমরা।
তিনি রিও গ্রান্ডে ডো সুলে কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, জনগণ মনে করছেন তাদেরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে ফেডারেল সরকার। উল্লেখ্য, করোনার শুরু থেকেই এর ঝুঁকিকে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এমনকি কোয়ারেন্টিন পদ্ধতিরও বিরোধিতা করেন তিনি।
তার দাবি, করোনা ভাইরাস যতটা ক্ষতি করবে, কোয়ারেন্টিন বা লকডাউন তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে অর্থনীতির। সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বাতিল হওয়ার পর প্রথমবার পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখেছেন বুধবার।
এদিন তিনি প্রেসিডেন্ট বলসোনারোকে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, অনেক মৃত্যুকে এড়ানো যেতো। তবে জবাবে বলসোনারো বলেছেন, এসব সমালোচনা অযৌক্তিক।
প্রাথমিক তথ্যে বলা হচ্ছে, মূল করোনা ভাইরাস যে গতিতে সংক্রমিত হয় বা বিস্তার লাভ করে তার চেয়ে দ্বিগুন গতিতে বিস্তার লাভ করে ‘পি১’ স্ট্রেইন। এই ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্রুত ধ্বংস করে দিতে পারে।
মূল করোনা ভাইরাসে আক্রমণের ফলে দেহে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় তাকে আক্রমণ করে নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি করে শতকরা ২৫ থেকে ৬০ ভাগের মধ্যে।
ফিওক্রুজ ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘পি১’ স্ট্রেইন কয়েকটি উদ্বেগজনক স্ট্রেইনের মধ্যে একটি। আটটি রাজ্যে গবেষণা করে তার মধ্যে ৬টিতেই এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।