গাজায় ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৩ এএম, ১৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৪৯ এএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে।
সংস্থাগুলো জানায়, গাজায় বর্তমানে ১ দশমিক ৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিপজ্জনক মাত্রার ক্ষুধার সম্মুখীন। ইসরাইলি বোমা হামলার ফলে এখানকার ৭০ শতাংশ কৃষি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকুরি হারিয়েছে।
গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)'র অধীনে ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় তৈরি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এরই মধ্যে গাজার জনসংখ্যার ছয় শতাংশ বা ১৩৩ হাজার মানুষ সর্বনাশা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে এবং আগামী বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এই সংখ্যা ৩৪৫ হাজার মানুষ বা ১৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া সমগ্র গাজা উপত্যকা জুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ইতিমধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে এবং সাম্প্রতি যুদ্ধ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ আশঙ্কা আরো বেড়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আইপিসি রিপোর্টের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজার দুর্ভিক্ষ অগ্রহণযোগ্য। ইসরাইলের উচিত এই অঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের জন্য সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া।
জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক নিউইয়র্কে একটি রুটিন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, মহাসচিব গাজায় সাহায্য বিতরণে নিয়ন্ত্রক বাধাগুলো অপসারণ এবং শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো অভাবগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করতে পারে।
আইপিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কেবলমাত্র খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পানি ও মৌলিক পরিষেবাগুলোতে আরো বেশি অ্যাক্সেসের মাধ্যমে গাজায় দুর্ভিক্ষের হুমকি এড়ানো যেতে পারে।
সংস্থা অবিলম্বে নিঃশর্ত ও টেকসই যুদ্ধবিরতি, খাদ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং তীব্র অপুষ্টি প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু ও ছোট বাচ্চাদের দুধের কর্মসূচির উন্নতি করতে হবে এবং মায়েদের বুকের দুধ খাওয়াতে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে হবে। এছাড়াও, যেসব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না তাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
নিরাপত্তাহীনতা, প্রবেশের অসুবিধা, মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার আদেশ এবং যুদ্ধের মতো সমস্যা সত্ত্বেও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন পুনরুদ্ধার করতে এবং বিশেষ করে শীতকালে পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য করতে কাজ করছে।
সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল, বেথ বেকডল বলেছেন, তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা থেকে মুক্তি, মানবিক সহায়তা পুনরুদ্ধার এবং শীতকালীন ফসলের জন্য কৃষি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, কেবল মানবিক সহায়তা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। মানুষের প্রয়োজন তাজা ও পুষ্টিকর খাবার। আমদানিকৃত খাদ্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন পুনরায় শুরু করতেও কৃষকদের সহায়তা করতে হবে।
এফএও গাজা যুদ্ধের সময় ব্যাপকভাবে গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি এই অঞ্চলে গাজায় অবশিষ্ট মোট গবাদি পশুর ৪০ শতাংশ বা ৩০ হাজার ভেড়া ও ছাগল রক্ষায় একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি রাফাহ, খান ইউনিস ও দেইর উল-বালাহতে ৪,৪০০ টি গবাদি পশুর খামারে খাদ্য সরবরাহ করেছে এবং অসুস্থ গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ২,৪০০টি পশুপালক পরিবারকে চিকিৎসা সরবরাহ করেছে।
সংস্থা বলেছে, প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও গতিশীলতা পুনরুদ্ধার হলে এটি আরো বেশি পশুখাদ্য, গ্রিনহাউসের জন্য প্লাস্টিকের শীট, প্লাস্টিকেরপানির ট্যাঙ্ক, গবাদি পশুর ভ্যাকসিন, পুষ্টিকর খাবার ও আশ্রয় প্রদান করবে যাতে গবাদি পশু লালনপালন গাজার সব শিশুদের দুধের যোগান দিতে পারে।
সুত্র : বাসস