কাজাখস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৫৪ পিএম, ৫ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৮ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
পুরো মন্ত্রিপরিষদকে বরখাস্ত করে দেশের সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আসকার মামিনের নেতৃত্বে পুরো মন্ত্রিপরিষদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পেট্রল, ডিজেল এবং অন্য সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণেরও নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত এ মন্ত্রিপরিষদকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিবাগত রাতভর আলমাটি শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর। তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি তুলেছে। এ সময় তাদের কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দেন ‘ওল্ড ম্যান আউট’।
এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের পূর্বসুরি এবং মেন্টর নুরসুলতান নাজারবায়েভকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দেয়া হয়েছে। নাজারবায়েভকে এখনও দেশটিতে শক্তিধর হিসেবে দেখা হয়। অন্য বিক্ষোভকারীরা এ সময় যানবাহনের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে মেয়রের অফিসের সামনে সমবেত হয় জনতার ঢল। তা থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
এ অবস্থার অবসানে পশ্চিমাঞ্চলীয় মাঙ্গিসতাউ প্রদেশসহ সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে আজ বুধবার সকালে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। এ সংক্রান্ত ডিক্রিতে তিনি বলেন, এই জরুরি অবস্থা জারি থাকবে দুই সপ্তাহ। একই সঙ্গে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। চলাচলে বিধিনিষেধ থাকবে। গণসমাবেশ থাকবে নিষিদ্ধ।
এর আগে রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বলেন, সরকারি এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার আহ্বান একেবারেই বেআইনি। সরকারের পতন হবে না। তবে আমরা সংঘাতের পরিবর্তে পারস্পরিক আস্থা এবং সংলাপ চাই।
মধ্য এশিয়ার এ দেশটিতে ম্যাসেঞ্জার অ্যাপস টেলিগ্রাম, সিগন্যাল এবং হোয়াটসঅ্যাপ রয়েছে বন্ধ। বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করে এমন দুটি নিরপেক্ষ মিডিয়ার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১লা জানুয়ারি এলপিজির দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। এর ফলে ২রা জানুয়ারি থেকে পশ্চিমের ম্যাঙ্গিসতাউ অঞ্চলের ঝানাজোয়েন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ অঞ্চলটি টিকে আছে অপেক্ষাকৃত সস্তা এলপিজির ওপর। একে অটোমোবাইল খাতে প্রধান জ্বালানি হিসেবে দেখা হয়। বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, এলপিজির দাম বাড়িয়ে দেয়ার ফলে সেখানে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ম্যাঙ্গিসতাউ, কাজাখস্তান, মধ্য প্রদেশ আকতাউ, আলমাটি এবং রাজধানী নূর সুলতানে।
উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার দিনশেষে টুইট করেন কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। তিনি বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ম্যাঙ্গিসতাউয়ে এলপিজির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী সেখানে এক লিটার এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ কাজাখ টেঞ্জ ( বা ০.১১ ডলার)। এই মূল্য বাজার দামের চেয়ে অর্ধেক। কিন্তু নিরপেক্ষ মিডিয়াগুলো বলছে, সরকারের এই ঘোষণায়ও ঝানাওজেন এবং আকতাউয়ের বিক্ষোভ দুর্বল করতে পারেনি।
আকতাউ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ফুটেজ শেয়ার করা হয়েছে মঙ্গলবার রাতে, তাতে দেখা যায়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে শহরের কেন্দ্রস্থলে ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। নূর সুলতানে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ বলেছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণায় শহরগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।