তালিকায় জালিয়াতি, বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রকাশ বন্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৫৪ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৮ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশে দেশে ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশের তথ্য জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে আসছিল বিশ্বব্যাংক। এতে দেশগুলো কতটা ব্যবসাবান্ধব, তা তুলে ধরা হতো। ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রতিবেদনটি। কিন্তু এ তালিকায় নাম ওপরে-নিচে বসানোর জন্য দেন-দরবার হতো বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে। পরে এ নিয়ে তদন্তে নামে কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা যায়, চীন ও সৌদি আরবের নাম জালিয়াতির মাধ্যমে যোগ্য অবস্থানের চেয়ে কয়েকধাপ ওপরে ওঠানো হয়েছিল। এর জেরে শেষ পর্যন্ত ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রকাশই বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবর অনুসারে, উইলমারহেল নামে একটি আইনবিষয়ক ফার্মকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তদন্তকারীরা দেখতে পান, ২০১৭ সালে ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ২০১৮ সালের সূচকে চীনের অবস্থান ওপরে দেখাতে সহকর্মীদের চাপ দিয়েছিলেন। এর জন্য চীনকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে বাড়তি পয়েন্ট দিতে বলেছিলেন তিনি।
উইলমারহেলের ১৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময় চীনের সঙ্গে একটি মূলধন বৃদ্ধি প্রচারণা নিয়ে দেন-দরবার করছিলেন জর্জিয়েভা। ধারণা করা হচ্ছে, এর জন্যই সূচকে চীনের অবস্থান বদলাতে বলেছিলেন তিনি।
স্বাধীন তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, র্যাংকিংয়ে চীনকে ওপরে তুলতে সরাসরি জড়িত ছিলেন জর্জিয়েভা। সে সময় এক বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ও দেশটিতে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের তৎকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টরকে তিরস্কার করেছিলেন।
তদন্তে দেখা যায়, ২০১৭ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সহযোগীরাও জরিপ টিমকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাইওয়ান ও হংকংয়ের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে চীনের চূড়ান্ত স্কোর কীভাবে পরিবর্তন করা যায় তা দেখতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের সূচকে চীনের অবস্থান সাত ধাপ এগিয়ে ৭৮ নম্বরে দেখায় বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে চীনাদের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু পয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল সংস্থাটি।
উইলমারহেলের তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২০ সালের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে সৌদি আরবের অবস্থানও অনৈতিকভাবে নাড়াচাড়া করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ২০১৯ সালের সূচকে সৌদি আরবের সংস্কার কার্যক্রম ঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি দাবি করে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল দেশটির সরকার। পরের বছর ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিমিওন জ্যাঙ্কভসহ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জরিপ টিমকে নির্দেশ দেন, তালিকার ‘শীর্ষ উন্নতিকারীদের’ মধ্যে যেন জর্ডান শীর্ষস্থানে না যায়। এরপর ঘটনাক্রমে জরিপ টিম সৌদি আরবের জন্য বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বাড়তি পয়েন্ট যোগ করে এবং এর ফলে দেশটি জর্ডানের স্থান দখল করে নেয়।
জ্যাঙ্কভ জানিয়েছেন, সৌদি আরবের তথ্য পরিবর্তনের নির্দেশ এসেছিল বিশ্বব্যাংকের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছ থেকে, যাদের মধ্যে একজন ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিমের চিফ অব স্টাফ ছিলেন এবং ডুয়িং বিজনেসের ২০১৮ সংস্করণে চীনের তথ্য পরিবর্তনেও জড়িত ছিলেন।
জালিয়াতিতে অভিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী জর্জিয়েভা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তিনি। এক বিবৃতিতে জর্জিয়েভা বলেছেন, ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে অনিয়মের তদন্ত এবং এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার বর্ণনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। বিষয়টি আইএমএফ বোর্ডকে অবহিত করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সূত্রের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ তাদের এথিক্স কমিটিকে উইলমারহেলের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছে। পর্যালোচনা শেষে নিজস্ব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিমের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল সিএনএন। তবে এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।