চট্টগ্রামের উইম্যান ইউনিভার্সিটি সেই দেড়শ আফগান ছাত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩২ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
চট্টগ্রামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান’র (এইইউডব্লিউ) দেড়শ আফগান ছাত্রী শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশা হলো না। পরিবর্তে তাদের ঠাঁই মিলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে দেশের ১০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। সেখানে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র সকার প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীদের তিন মাসের বৃত্তি নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে তাদের রাখা হয়েছে ওয়েসকনসিনের ম্যাককয় সেনা ঘাঁটিতে।
এইইউডব্লিউ’র প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি কামাল আহমেদ বলেছেন, সব ছাত্রীর পুরোপুরি বৃত্তির আওতায় শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ছাত্রীদের মধ্যে ৮৫ জন হলেন এইইউডব্লিউ’র শিক্ষানবিশ শিক্ষার্থী এবং ৪৭ জন স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী। অবশিষ্ট ১৬ জন হলেন এইইউডব্লিউ’র প্রাক্তন ছাত্রী (এলামনাই) ও তাদের স্বজন।
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন সেগুলো হলো- আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, কর্নেল ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওর, সাফোলক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা, চার্লট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন নিউ হ্যামশায়ার ইউনিভার্সিটি, কর্নেল কলেজ ও কলাম্বিয়া কলেজ। এইইউডব্লিউ গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য দিয়েছে।
এইইউডব্লিউ সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা সারাদেশ দখল করে নিলে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান’র (এইইউডব্লিউ) ১৬২ ছাত্রী নিজ দেশে আটকা পড়েন। সারাবিশ্বে করোনার বিস্তার হলে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম শহরের এমএম আলী রোডের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থিত এইইউডব্লিউ’র ক্যাম্পাসে লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে চলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। তালেবানরা কাবুল কব্জা করলে ওই ছাত্রীরা চট্টগ্রামে ফিরতে আকুল হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ১৩২ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী, ১৬ জন এলামনাই এবং তাদের স্বজন গত ২৮ আগস্ট কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটিতে ফেরেন। ওই উড়োজাহাজে আফগানিস্তানে চাকরিরত ৬ বাংলাদেশিও ছিলেন যারা ১ সেপ্টেম্বর দুবাই হয়ে ঢাকায় ফিরতে সক্ষম হন।
কিন্তু এইইউডব্লিউ’র ছাত্রীদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের তথ্য দিতে সম্মত ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাবুল থেকে উদ্ধার হয়ে দোহা যাওয়ার পরও অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমে তারা অংশ নিচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত জানা গেল আমেরিকাতেই তাদের ঠাঁই হওয়ার খবর।
এইইউডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ১৪৮ আফগান ছাত্রী ও তাদের স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ফোর্ট ম্যাককয় নামক সেনা ঘাঁটিতে নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ তাদের বায়োমেট্রিক, মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে আবার স্থায়ীভাবে বসবাসের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।
চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা বায়েজিদ এলাকায় প্রায় ১০০ একর জায়গাতে এইইউডব্লিউ’র স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে ওঠার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ওই জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবার ফ্যাকাল্টির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করেন। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় নগরীর এমএম আলী রোডের অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে শতভাগ আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। এখানে এশিয়ার ১৯টি দেশের প্রায় এক হাজার ছাত্রী আছেন। বিশ্বব্যাংক, মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনসহ আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষে এখানে নিয়মিত বৃত্তি প্রদান করে থাকে।