মিয়ানমারে গণমৃত্যুর আশঙ্কা জাতিসংঘের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৫ এএম, ১০ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৭ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযানের কারণে দেশটির কায়াহ প্রদেশে গণমৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এই শঙ্কার কথা জানান।
বিবৃতিতে অ্যান্ড্রুজ জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দেশের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কায়াহতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় ওই প্রদেশের স্বাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী কারেন্নি পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (কেপিডিএফ)-এর। দু পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলি, বিমান হামলা ও গোলা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে কায়াহ প্রদেশের ১ লাখেরও বেশি মানুষ।
অ্যান্ড্রুজ তার বিবৃতিতে বলেছেন, খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাবে এই বাস্তুচ্যুতরা এখন গণমৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন এবং শিগগির কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে সেখানে।
তিনি বলেন, ‘একদম স্পষ্ট করে বললে, যদি দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে খাদ্য ও পানির অভাব, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও আশ্রয়ের অভাবে কায়াহ প্রদেশের বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ব্যাপকমাত্রায় গণমৃত্যু দেখা দেবে। এটি এমন মাত্রায় দেখা দেবে, যা এখন এখানে বসে থেকে আমরা কল্পনাও করতে পারব না। এর চেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মিয়ানমারে আগে দেখা যায়নি।’
অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, ‘জীবন রক্ষার তাগিদেই একসময় তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ঢুকতে চাইবে, ইতিমধ্যে এমনটি শুরুও হয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন এই হার বাড়তে থাকবে তখন মিয়ানমার ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েবে। আমাদের এখন উচিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের হাত থেকে দেশটির সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’ ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলে নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ও তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপকে মোটেই স্বাগত জানায়নি দেশটির গণতন্ত্রপন্থী জনগণ। অভ্যুত্থানের পরের দিন থেকেই অং সান সু চিসহ গ্রেফতার অন্যদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই অস্থির পরিস্থিতিতে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে মিয়ানমারের প্রদেশভিত্তিক একাধিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা তদের নিজ নিজ প্রদেশের স্বাধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
এদিকে দেশে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার প্রথম পর্যায়ে ক্ষমতাসীন জান্তা দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে কঠোর হাতে তা দমনের উদ্যোগ নেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লাঠি, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছেন অন্তত ৮৫০ জন বিক্ষোভকারী, আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। এছাড়া কারা অন্তরীণ আছেন প্রায় ছয় হাজার। কায়াহ প্রদেশে সর্বশেষ গত ২১ মে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রদেশের লইকাউ শহরে সেদিন বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় বেশ কয়েকজন মারা গেছেন ওইদিন। তবে সেই সংখ্যাটি কত তা এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।