ব্যয় বাড়ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৮ এএম, ১০ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৩ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পাঁচ মাস মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আবারও ব্যয় বাড়ছে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে (ফেইজ-১)। ফলে তৃতীয় বারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ পর্যায়ে ব্যয় বাড়ছে ৮১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে বলা পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের কাজের আওতা বৃদ্ধি : জালিয়ারদ্বীপ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ, আনোয়ারা-২, আনোয়ারা, এসইজেড, কেরানীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, বন্দর ও সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি কার্যকর করা সম্ভব না হওয়ায় মীরসরাই ও এর সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের উন্নয়নের জন্য অন্যান্য অঞ্চলের অব্যবহিত তহবিল ব্যবহার করা করা হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অঞ্চলের বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন এজেন্সি এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের জন্য অফিস স্পেসের সম্প্রসারণ করা হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে আগে প্রস্তাবিত একক লেনের রাস্তার পরিবর্তে দুই লেনসম্পন্ন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
বিভিন্ন খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি : এলাকা বৃদ্ধির কারণে জমি ভরাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমি উন্নয়ন খাতে ব্যয় প্রাক্কলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ব্রিজ নির্মাণ, সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ইছাখালী চ্যানেলের পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে স্লুইস গেট নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে।
কতিপয় খাতে ব্যয় হ্রাস : অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন খাত এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যয় হ্রাস করা হবে।
ইতোপূর্বে গৃহীত পূর্বানুমোদনের প্রতিফলন : পরিকল্পনা কমিশন থেকে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া কিছু অংশের ব্যয় ও পরিমাণের পরিবর্তন করে আগে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী এই সংশোধন প্রস্তাবের মাধ্যমে এসব পরিবর্তনের প্রতিফলন করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক কোডের পুনঃবিন্যাস : নতুন অর্থনৈতিক কোডের পুনঃবিন্যাসের কারণে প্রকল্পের কিছু অর্থনৈতিক কোডের পুনঃবিন্যাস করা হবে।
জানা যায়, প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য হল অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ও পরিচালনায় স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা।
এছাড়া প্রকল্পটির সুনিদিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে, মোংলা, মিরসরাই এবং সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য অনসাইট ও অফসাইট মৌলিক অবকাঠামো এবং আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মূল প্রকল্পে প্রস্তাবিত কিছু এলাকায় কার্যক্রম নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই সব এলাকার অব্যবহিত তহবিল মিরসরাইয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ব্যবহার করা হবে। বাস্তবতার জন্য ভৌত অবকাঠামোতে কিছু পরিবর্তন সাধন, কিছু খাতে ব্যয় প্রাক্কলন পরিবর্তন প্রয়োজন হওয়ায় প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ, যুগোপযোগীকরণ, গতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ যথাযথভাবে নির্ধারণের স্বার্থে অর্থনীতি সংশোধন প্রয়োজন, তাই সংশোধনটি অনুমোদনযোগ্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ইকোনমিক জোন তৈরি ও উন্নয়নের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা এবং বেজার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) এবং ডিএফআইডি সম্মত হয়। এই ধারাবাহিকতায়, উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক এবং ডিএফআইডির অর্থায়নে মোট ৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালে জুনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক মূল প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ৩ জুন একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদকাল ছাড়া মোট ১২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রথম সংশোধনী বাস্তবায়নের জন্য একনেক ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর এবং মোট ৯০৫ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ৮৮৬ কোটি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধনী ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয়। বর্তমান প্রকল্পের ব্যয় আরও ৮১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৪ সালের জানুয়ারি হতে ২০২১ সালের জুনে প্রস্তাবসহ তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন, ভূমি উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদি।