বাংলাদেশি ১৯ জনের বিস্তারিত দুবাইয়ে থাকা সম্পদের তথ্য: সিফোরএডিএস
দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশিদের সম্পদের পাহাড় দুবাইতে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্যাক্স অবজারভেটরির ২০২১ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন অফশোর সম্পত্তির মূল্য ২৬ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী 'সেকেন্ড হোম' হিসেবে সিঙ্গাপুরের পর দুবাই হচ্ছে বাংলাদেশি ধনীদের পছন্দের গন্তব্য।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিফোরএডিএস) সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগের এই পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ হতে পারে।
সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ দুবাই ভূমি বিভাগের ২০২০ ও ২০২২ সালের রেকর্ড ও কিছু ইউটিলিটি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি ডেটাসেট তৈরি করে। এই ডেটাসেটটি ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের 'দুবাই আনলকড' শীর্ষক বৈশ্বিক তদন্তে ব্যবহার করা হয়। তবে, সেখানে বাংলাদেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
দ্য ডেইলি স্টার এই ডেটাবেস পর্যালোচনা করে দেখেছে, ৪৬১ বাংলাদেশির নামে দুবাইয়ে ৯২৯টি সম্পত্তি নিবন্ধিত রয়েছে।
এসব সম্পত্তির মধ্যে ২৫৯টি রাজনীতিবিদ, বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের নামে নিবন্ধিত।
এই ৪৬১ জনের নাম ও তাদের সম্পত্তির সংখ্যা ২০২০ ও ২০২২ সালের ডেটা থেকে নেওয়া হয়েছে, যা সংগ্রহ করেছে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ। এসব সম্পত্তির মালিকরা এর মধ্যে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে থাকতে পারেন বা নতুন আরও সম্পত্তি কিনে থাকতে পারেন।
দ্য ডেইলি স্টার ২০২৪ সালের আগস্টে এই ডেটাবেসের এক্সেস পায়।
ভূমি রেকর্ড ব্যবহার করে দ্য ডেইলি স্টার ৯২৯টি সম্পত্তির মধ্যে ২৭১টির মূল্য বিশ্লেষণ করেছে, যেগুলোর মূল্য সহজে পাওয়া যায়। এই ২৭১টি সম্পত্তির মূল্য অনুযায়ী মোট ৯২৯টি সম্পত্তির মূল্য প্রাক্কলন করে দেখা গেছে যে, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন সম্পত্তির মোট মূল্য ৪০ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
১৯ জনের বিস্তারিত তথ্য
দুবাইয়ের ভূমি বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি সম্পত্তি কর ও সেবা চার্জ সম্পর্কিত নথি সংগ্রহ করা গেছে, এমন ১৯ জনের তালিকা তৈরি করেছে দ্য ডেইলি স্টার।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ১৯ জন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ৮২টি সম্পত্তির কর, সেবা চার্জ ও অন্যান্য নথি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এসব সম্পত্তির দলিল নম্বর রয়েছে এবং দুবাইয়ের ভূমি বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে সেগুলো যাচাই করা হয়েছে। 'দুবাই আনলকড' প্রজেক্টের জন্য ওসিসিআরপি যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, সেই একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করে দ্য ডেইলি স্টারও এসব সম্পত্তির মালিকানা যাচাই করেছে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের ডেটাবেসে অ্যাক্সেস পাওয়ার পাঁচ মাস পর—২০২৪ সালের ডিসেম্বরে—এই ১৯ জন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে ৮২টি সম্পত্তি তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। একটি সম্পত্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ১৯ জনের মধ্যে অন্যতম—
- সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
- ঢাকা-১০ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এইচবিএম ইকবাল
- ঢাকা-১০ আসনের সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালু
- সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিসান মির্জা
- ব্যবসায়ী নাফিজ সরাফাত
- ব্যবসায়ী সায়েম সোবহান আনভীর ও তার ভাই সাফওয়ান সোবহান তাসবীর
- ওরিয়ন গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম
- পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এমএ হাশেমের দুই ছেলে আজিজ আল কাইসার ও আজিজ আল মাসুদ
এ ছাড়া, তালিকায় রয়েছেন শাহাব সাত্তার ও তাসবীরুল আহমেদ চৌধুরী, যারা বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের মালিক বা প্রধান ছিলেন।
দ্য ডেইলি স্টারের কাছে থাকা নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শাহাব সাত্তার ও তাসবীরুল আহমেদ চৌধুরীর কাছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৭৮৫ কোটি টাকা পাওনা।
তবে, দুবাইয়ে এসব সম্পত্তি কেনার অর্থের উৎস কী, সেটা দ্য ডেইলি স্টার নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করেই এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে, তেমন কোনো প্রমাণও দ্য ডেইলি স্টারের হাতে নেই।
বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রা নীতি অনুযায়ী, দেশ থেকে মূলধন স্থানান্তর নিষিদ্ধ। তবে, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা বৈদেশিক আয় আছে, তারা বৈধভাবে বিশ্বের যেকোনো স্থানে সম্পত্তি কিনতে পারেন এবং অবশ্যই সেটা আয়কর নথিতে ঘোষণা করতে হবে।
এই ব্যক্তিরা দুবাইয়ে তাদের সম্পত্তির তথ্য নিজেদের আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন কি না, তা দ্য ডেইলি স্টার নিশ্চিত করতে পারেনি।
পাঁচ মাস ধরে চলা আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, এই ব্যাক্তিদের কেউ কেউ বর্তমানে বা পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তাদের কেউ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, আবার কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গত নভেম্বরে এমন অন্তত তিনজন আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, যাদের সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে।
অনেকের নামে শত শত কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করা ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের মামলা রয়েছে। আবার অনেকের কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চলমান।
দুবাই ভূমি বিভাগের সরকারি রেকর্ড এবং সম্পত্তির প্রতি বর্গফুটের গড় মূল্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়েছে যে, এই ১৯ জনের মালিকানাধীন ৮২টি সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ২৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
কিছু ক্ষেত্রে এসব সম্পত্তি পরিবারের সদস্য বা অন্যান্য একাধিক সুবিধাভোগীর নামে রয়েছে। কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের নাম এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে না, কারণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে, দ্য ডেইলি স্টার এখনো এমন কোনো প্রমাণ এখনো পায়নি যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এই সম্পত্তিগুলো বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় কেনা হয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টার এই ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, বাকি একজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন আমাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাদের কেউ দাবি করেছে, বিদেশে আয় থেকে বৈধভাবে এসব সম্পত্তি কিনেছেন, আবার কেউ তাদের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
মন্তব্য জানতে চেয়ে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তার উত্তর দিয়েছেন—
- বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাফওয়ান সোবহান
- ব্যাংকার নাফিজ সরাফাত
- স্টার সিরামিকসের চেয়ারম্যান সৈয়দ একে আনোয়ারুজ্জামান
- আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ইকরামুজ্জামান
- ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম
বাকিরা দ্য ডেইলি স্টারের প্রশ্নের কোনো ধরনের জবাব দেয়নি কিংবা মোবাইলে বা ইমেইলে তাদের পাওয়া যায়নি।
সম্পত্তির তথ্য অনুযায়ী, তাদের পছন্দের জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে দুবাইয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকাগুলো। যেমন:
- বুর্জ খলিফার কাছাকাছি এলাকার সম্পত্তি, যেগুলো শহরের আইকনিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে চিহ্নিত
- মার্সা দুবাই
- দুবাইয়ের অর্থনৈতিক জেলা বিজনেস বে
- পারস্য উপসাগরের বিলাসবহুল কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ পাম জুমেইরা
সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের ডেটাবেস অনুযায়ী, দুইজন বাংলাদেশি বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ভেতরেও ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাদের মধ্যে দ্য ডেইলি স্টার শুধুমাত্র সায়েম সোবহান আনভীরের নাম প্রকাশ করছে, কারণ দুবাই ভূমি বিভাগ থেকে শুধুমাত্র তার নথি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
পাম জুমেইরায় সম্পত্তির মালিক ২০ বাংলাদেশির মধ্যে এমন ৮ জন রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মামলা রয়েছে।
বুর্জ খলিফা এলাকায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন অন্তত ৬১টি সম্পত্তি রয়েছে। যার মধ্যে ২১টির নিবন্ধন চারজন ব্যক্তির নামে, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
গোল্ডেন ভিসা ও লেয়ারিং: সম্পত্তি কেনার কৌশল
এসব সম্পত্তির মধ্যে অনেকগুলো গোল্ডেন ভিসা ব্যবহার করে লেয়ারিং পদ্ধতিতে কেনা হয়েছে।
যেমন: বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের ফ্ল্যাটটি তার যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশন এফজেডইর নামে কেনা হয়েছে। কোম্পানিটিতে তিনি পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। কোম্পানিটির নথিতে আনভীরকে স্লোভাকিয়ার নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্লোভাকিয়ার গোল্ডেন পাসপোর্টকে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বলে মনে করা হয়। এর জন্য অন্তত ১০০ মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হয়।
সায়েম সোবহানের ভাই সাফওয়ান সোবহানের ঠিকানা দুবাইয়ের কর্নিশ ১ স্ট্রিটে এমিরেটস হিল থার্ড এলাকায়। তবে, দুবাই ভূমি বিভাগ থেকে এই বাড়িটির মালিকানার তথ্য যাচাই করা যায়নি। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশ নয়, সাইপ্রাসের নাগরিক। দ্য ডেইলি স্টার ২০১৪ সালের জুলাইয়ে সাইপ্রাসের সংবাদপত্র এলিথিয়ার প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহ করেছে, যেখানে তার নাগরিকত্ব ঘোষণা করা হয়।
আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, একটি কর্মসূচির অধীনে সাইপ্রাস ধনী বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেয়। এর জন্য প্রায় ২০ লাখ ইউরো বা প্রায় ২৫ লাখ ডলার সাইপ্রাসের রিয়েল এস্টেটে এবং আরও ২ লাখ ইউরো সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে বিনিয়োগ করতে হয়।
ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিমও দুবাইয়ে সম্পত্তি কিনতে একই পথ অনুসরণ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। তার নামে দুবাইয়ে যেসব সম্পত্তি নিবন্ধিত রয়েছে, তার কোনোটিই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে কেনা হয়নি।
দুবাইয়ের একটি হোটেলের রেজিস্ট্রেশন নথিতে তাকে আলবেনিয়ার নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই হোটেলে তার মালিকানা রয়েছে। আলবেনিয়ার করপোরেট রেজিস্ট্রির রেকর্ডে তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি অ্যাগ্রি প্রোডাক্টস ইউরোপের উল্লেখ রয়েছে, যা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে গোল্ডেন পাসপোর্ট স্কিমের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিয়েছে আলবেনিয়া।
বাহরাইনের করপোরেট রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, ওরিয়ন ফার্মা বাহরাইনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের। এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে ছিলেন। তবে সেখানে তার ছেলেকে বাংলাদেশি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ওবায়দুল করিমকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুবাইয়ের কোম্পানি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, ওবায়দুল করিমের মেয়ে জারিন করিম সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি জেশা জেনারেল ট্রেডিং এলএলসির মালিক, যেখানে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাকে ডোমিনিকান নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর সূত্র ধরে দ্য ডেইলি স্টার ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিমের ডোমিনিকান পাসপোর্টের একটি কপি হাতে পেয়েছে, যেগুলো ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ইস্যু করা হয়। ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই পাসপোর্টগুলো আসল।
২০২৪ সালে জারিন করিম ডোমিনিকার সম্মানসূচক কনসাল হিসেবে বাংলাদেশে নিয়োগ পান এবং তিনি এখনো এই পদে রয়েছেন।
বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, ডোমিনিকান রিপাবলিকে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। এর জন্য দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতে ২ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয় অথবা দেশটির অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ তহবিলে এই পরিমাণ অর্থ দিতে হয়।
দুবাইয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অন্তত ৩৭টি সম্পত্তি রয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। দুবাইয়ে কোনো বাংলাদেশির নামে নিবন্ধিত সর্বোচ্চ সংখ্যক সম্পত্তি তার নামে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি সম্পত্তি তিনি কিনেছেন নিজেকে আমেরিকান সামোয়ার নাগরিক দেখিয়ে। আমেরিকান সামোয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঞ্চল, যা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সাতটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
দ্য ডেইলি স্টারের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তার নামে থাকা প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১৬টি সম্পত্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ২০২৪ সালে, নয়টি ২০২৩ সালে, একটি ২০২২ সালে এবং দুটি ২০২১ সালে বিক্রি হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
- সাবেক ভূমিমন্ত্রী এবং দুবাইয়ে একক বৃহত্তম বাংলাদেশি সম্পত্তি ক্রেতা
- ২০২৪ সাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ৭০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৩৭টি সম্পত্তি রয়েছে তার নামে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তার মালিকানাধীন অন্তত ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১৬টি সম্পত্তি হাতবদল হয়েছে।
সম্পত্তির বিবরণ
- দুবাইয়ের নাদ আল শিবা ফার্স্টের কাছাকাছি এলাকায় ২৯টি পাঁচতলা ভবনের ক্লাস্টার পলো রেসিডেন্সে তার নামে ২৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের গড় মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।
- বুর্জ খলিফার কাছে মাদা রেসিডেন্স টাওয়ারে তার নামে অন্তত দুটি সম্পত্তি নিবন্ধিত রয়েছে।
- ব্যবসায়িক বেই এলাকায় কেম্পিনস্কি রেসিডেন্সে তার নামে আরও দুটি সম্পত্তি রয়েছে।
- আল ফুরজান এলাকায় রয় মেডিটেরেন ভবনে তার দুটি স্টুডিও প্রোপার্টি রয়েছে।
- জুমেইরাহ ভিলেজ সার্কেলের হামেনি টাওয়ারে রয়েছে দুটি এক বেডরুমের ফ্ল্যাট।
সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের ডেটাবেস অনুযায়ী, এই নামে আরও অন্তত ২৪টিরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু, রেকর্ডে পাসপোর্ট নম্বর ও জন্ম তারিখের মতো অন্য কোনো বিবরণ না থাকায় এটি নিশ্চিত নয় যে, সম্পত্তিগুলো তারই।
তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনির নামে পাম জুমেইরার গোল্ডেন মাইল ৪-এ দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য আনুমানিক ১০ কোটি টাকা।
তদন্ত
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার ও তার পরিবারের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, ঢাকার একটি আদালত তার ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে।
মন্তব্য
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হয়। গত মাস ধরে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ভাই রনিও আমার কল, ইমেইল ও হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজের জবাব দেননি।
মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ও পরিবার
- ওরিয়ন গ্রুপের মালিক
- দুবাইয়ে একটি হোটেল ও তিনটি আবাসিক সম্পত্তির মালিক, যার মোট মূল্য ৬৭ কোটি টাকা
সম্পত্তির বিবরণ
- দুবাইয়ের চার তারকা হোটেল প্যালেট রয়েল রিফ্লেকশন হোটেল অ্যান্ড স্পা দুবাইয়ে ওবায়দুল করিমের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০১৪ সালে নির্মিত এই ১০০ কক্ষের হোটেলটি বুর দুবাই এলাকায় অবস্থিত।
- ওবায়দুল করিম, তার স্ত্রী আরজুদা করিম ও মেয়ে জারিন করিমের নামে দুবাইয়ে আরও তিনটি সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলোর মোট মূল্য ৫০ কোটি টাকা।
- আল মেরকাধ এলাকায় ওবায়দুল করিমের নামে থাকা সম্পত্তিটির মূল্য ৪২ কোটি টাকা।
- একই এলাকায় তার স্ত্রীর নামে অনুরূপ একটি সম্পত্তির রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা।
- তার মেয়ে জারিন করিমের নামে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রেসিডেন্সে।
দণ্ড
২০০৮ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগে ওবায়দুল করিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং এনবিআর ওরিয়ন গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর স্থগিত করেছে।
মন্তব্য
ওবায়দুল করিম বিদেশে কোনো সম্পত্তি থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি আলবেনিয়ান ও ডোমিনিকান পাসপোর্ট থাকার কথা স্বীকার করলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, 'আমি স্পষ্ট করতে চাই যে, আমার নামে বিশ্বের কোথাও উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পত্তি নেই। তালিকায় উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো আমার নয়। গুজব রয়েছে যে দুবাইয়ের রিফ্লেকশনস হোটেল এলএলসি আমার।'
'প্রকৃত সত্য হলো, রিফ্লেকশনস হোটেল এলএলসির প্রকৃত মালিক হলেন আলি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফ ফালাকনাজ, যিনি দুবাইয়ের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই হোটেল নির্মাণ করেছেন। আমাদের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে তিনি আমাকে সম্পত্তিটি লিজ দিয়েছিলেন। লিজগ্রহীতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল মালিকের কাছে লিজের অর্থ দেওয়ার বদলে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করা। আবারও নিশ্চিত করছি, উল্লিখিত সম্পত্তিতে আমি কোনো বিনিয়োগ করিনি।'
'আমি শুধুমাত্র একজন লিজগ্রহীতা। আলি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফ ফালাকনাজের মৃত্যুর পর আমি লিজ চুক্তি নিয়মিত না করার সিদ্ধান্ত নেই। পরবর্তীতে সম্পত্তিটি আরেকজনের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে। পুনরায় বলতে চাই, আমার নামে বিশ্বের কোথাও কোনো সম্পত্তি নেই। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে যাচাই করার জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারেন।'
সৈয়দ একে আনোয়ারুজ্জামান
- স্টার সিরামিকস ও এসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান।
- নিজ নামে সাতটি ও মেয়ের নামে একটি সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলোর মোট মূল্য ৩৬ কোটি টাকা।
সম্পত্তির বিবরণ:
- বুর্জ খলিফার কাছাকাছি এলাকায় আনোয়ারুজ্জামানের নামে পাঁচটি সম্পত্তি রয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ওই এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে তার সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি।
- ওয়েস্ট হাইটস ১ ও ২ টাওয়ারের ২৩ ও ৩০ তলায় দুই বেডরুমের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
- বুর্জ খলিফার কাছাকাছি মিসকা-৪ হাইরাইজে দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
- গগনচুম্বি টু টাওয়ার্স বি-তে একটি পেন্টহাউস অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
- দুবাই স্পোর্টস সিটিতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের বুকিং রয়েছে।
- বুর্জ খলিফার দ্য অ্যাড্রেস দ্য বুলেভার্ড টাওয়ারে তিনি ও তার পরিবারের আরেকজন সদস্যের প্রত্যেকের একটি করে এক বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস
২০১৯ সালে দুবাইয়ে অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে। গত ১৪ নভেম্বর তদন্ত চলাকালে ঢাকার একটি আদালত তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
মন্তব্য
গত ৫ নভেম্বর তার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করা হয় এবং গত ১৪ নভেম্বর আদালত থেকে খালাস পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নিজের গুলশান অফিসে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। তিনি নিশ্চিত করেন, এই সম্পত্তিগুলো বৈধ বৈদেশিক আয় থেকে কিনেছেন।
সাম্প্রতিক তিনি চারটি সম্পত্তি বিক্রি করেছেন—ওয়েস্ট হাইটস ২-এর দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট, কেম্পিনস্কিতে এক বেডরুমের ফ্ল্যাট, হারবার ভিউসের ৩৪ তলার তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট এবং টু টাওয়ার্সের পেন্টহাউস অ্যাপার্টমেন্ট।
তিনি বলেন, 'এগুলো বৈধ বৈদেশিক আয় দিয়ে কেনা হয়েছে। ব্যবসায়ীক সফলতার সুবাদেই আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে দুবাইয়ে আমার কয়েকজন বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে মিলে তিনটি নির্মাণ সামগ্রীর ট্রেডিং কোম্পানি শুরু করেছিলাম। সেগুলো এখনও সফলভাবে চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুদকের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আদালত তাদের তদন্তে সন্তুষ্ট হয়নি।'
এমএ হাসেম ও তার ছেলেরা
- নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য এবং পারটেক্স স্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
- দুবাইয়ে তার রয়েছে তিনটি সম্পত্তি, যার মোট মূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা।
সম্পত্তির বিবরণ
- পারটেক্স গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান এমএ হাসেমের নামে মার্সা দুবাই এলাকায় ৮৪ তলা ওশান হাইটস ভবনের ৪১ তলায় একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
- পাম জুমেইরায় বিচমুখি আল খুদরাউই টাওয়ারে তার দুই ছেলে আজিজ আল কাইসার ও আজিজ আল মাসুদের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে—৫ তলায় কাইসারের রয়েছে চার কক্ষের ফ্ল্যাট ও ১১ তলায় মাসুদের রয়েছে পাঁচ কক্ষের ফ্ল্যাট। মাসুদের ফ্ল্যাটটির মূল্য ১১ কোটি টাকা এবং কাইসারের ফ্ল্যাটের মূল্য তারচেয়ে একটু কম।
তদন্ত
২০২২ সালে পারটেক্স গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের ১০ সদস্যের ব্যাংকিং তথ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয় এনবিআর। বর্তমানে দুদক পারটেক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নোয়াখালীতে সরকারি খাসজমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ তদন্ত করছে।
মন্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাইসার ও মাসুদকে ইমেইল করা হলেও তারা কোনো জবাব দেননি।
সৈয়দ একে একরামুজ্জামান
- আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া রাজনীতিবিদ।
- দুবাইয়ে আছে সাতটি সম্পত্তি, যার মোট মূল্য কমপক্ষে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সম্পত্তির বিবরণ
- পাম জুমেইরায় আল শাহলা টাওয়ারের ৮ তলার অ্যাপার্টমেন্টটির মূল্য আনুমানিক ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
- মার্সা দুবাই এলাকায় সাদাফ-৬ টাওয়ারের ২৪ তলায় একটি এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট।
- দুবাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে লেডি রতন ম্যানর নামে আবাসিক ভবনে দুটি এক বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে তার মেয়ে শায়লিন জামানের নামে।
- দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে তার নামে একটি দুই বেডরুমের টেরেসড অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
- বিজনেস বে এলাকায় রিগ্যাল টাওয়ারের ২১ তলায় একরামুজ্জামানের রয়েছে একটি অফিস স্পেস।
দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস
২০১৯ সালে দুদক তার বিরুদ্ধে দুবাইয়ে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে। গত ১৪ নভেম্বর তদন্ত চলাকালীন ঢাকার একটি আদালত তাকে মামলা থেকে খালাস দেয়।
২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং জয়ী হন। নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তিনি ২ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেন এবং সে হিসাবে তিনিই ছিলেন ওই নির্বাচনে সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রার্থী।
মন্তব্য
দুবাই ভূমি বিভাগের ডেটাবেসে নিজ নামে থাকা সাতটি সম্পত্তির মধ্যে মাত্র তিনটির মালিকানার কথা স্বীকার করেছেন একরামুজ্জামান। সেগুলো হলো—আল শাহলা টাওয়ার, রিগ্যাল টাওয়ার ও সাদাফ-৬ টাওয়ারের সম্পত্তি।
তিনি দাবি করেন, এগুলো বৈধ বৈদেশিক আয় দিয়ে কেনা হয়েছে এবং বর্তমানে তার নামে দুবাইয়ে আর কোনো সম্পত্তি নেই।
হেফজুল বারি মোহাম্মদ ইকবাল
- ঢাকা-১০ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও প্রিমিয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান।
- তার নামে দুবাইয়ে দুটি ভিলা ও পাঁচটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যেগুলোর মোট মূল্য কমপক্ষে ৫৬ কোটি টাকা।
সম্পত্তির বিবরণ
- বুর্জ খলিফা এলাকায় তার তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে—উইন্ডসর ম্যানর টাওয়ারের ২৬ তলায় দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট, দ্য রেসিডেন্স টাওয়ার ই২ এর ৩৪ তলায় তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট ও বিডি স্ট্যান্ডপয়েন্ট রেসিডেন্সের ২১ তলায় এক বেডরুমের ফ্ল্যাট।
- এক্সএল টাওয়ারের ১৩ তলায় অফিস স্পেস।
- জুমেইরা ভিলেজে টাকসন রেসিডেন্সেস আরেজো-১ ভবনের ৫ তলায় এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট।
- পাম জুমেইরায় পাঁচ বেডরুমের ভিলা, যার মূল্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকা।
- আল হেবিয়া থার্ড এলাকার দামাক হিলস-কুইন্স মেডো নামে পাঁচ বেডরুমের ভিলা।
দণ্ড
২০০৮ সালের মার্চে সম্পত্তির তথ্য গোপন করার অভিযোগে তার ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই মামলা করে।
পরবর্তীতে হাইকোর্ট তাকে খালাস দিলেও ২০১৬ সালের নভেম্বরে আপিল বিভাগ তার দণ্ড বহাল রাখে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে দুদক তার বিরুদ্ধে গত দুই দশকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। তিন সদস্যের একটি কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
মন্তব্য
তিনি আমাদের কল ও ইমেইলের জবাব দেননি। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আশিকুর রহমান লস্কর
- মাহীন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেঘনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক।
- দুবাইয়ে দুটি সম্পত্তি রয়েছে, যার মোট মূল্য অন্তত ২৩ কোটি টাকা।
সম্পত্তির বিবরণ
চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ ভাঙা ব্যবসার মালিক আশিকুর রহমান লস্কর দুবাইয়ের বিলাসবহুল পাম জুমেইরার কাছাকাছি এলাকায় দুটি সম্পত্তির মালিক। লস্করের নামে আল হাসির টাওয়ারের ২ তলায় তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত আল খুদরাউই টাওয়ারের ৩ তলায় চার বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ছিল তার নামে। সাম্প্রতিক নথি অনুযায়ী, এই অ্যাপার্টমেন্টটি এখন তার পরিবারের অন্য একজন সদস্যের নামে রয়েছে।
অভিযোগ
আশিকুর রহমান লস্করের অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে একাধিক মামলা চলছে।
মন্তব্য
তিনি দ্য ডেইলি স্টারের কল ও ইমেইলের জবাব দেননি। ধারণা করা হচ্ছে, লস্কার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
সায়েম সোবহান আনভীর
- বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
- বুর্জ খলিফা টাওয়ারে ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট
সম্পত্তির বিবরণ
বুর্জ খলিফার আর্মানি রেসিডেন্সের ১২ তলায় তার মালিকানায় দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে, যা তার যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশন এফজেডইর নামে নিবন্ধিত। এর আনুমানিক মূল্য ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
তদন্ত
সিআইডি বসুন্ধরার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এ ছাড়া, বসুন্ধরা গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর স্থগিত করেছে এনবিআর।
মন্তব্য
তিনি আমাদের কল ও ইমেইলের জবাব দেননি এবং বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাফওয়ান সোবহান তাসবীর
- বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক।
- দুবাইয়ে একটি ভিলা রয়েছে, যার মূল্য জানা যায়নি।
সম্পত্তির বিবরণ
যুক্তরাজ্যের কোম্পানি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাসবীরের রেসিডেন্সি রয়েছে এবং তার ঠিকানা দুবাইয়ের এমিরেটস হিলস এলাকায়। এমিরেটস হিলস এলাকা ধনীদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। তবে দ্য ডেইলি স্টার দুবাই রেজিস্ট্রিতে তার সম্পত্তির রেকর্ড খুঁজে বের করতে পারেনি।
তদন্ত
সিআইডি বসুন্ধরার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এ ছাড়া, বসুন্ধরা গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর স্থগিত করেছে এনবিআর।
মন্তব্য
তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রুপের মিডিয়া বিভাগের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তার মন্তব্য জানিয়েছেন। দুবাইয়ে সম্পত্তি সম্পর্কে সরাসরি কিছু না বলে তিনি জানিয়েছেন, 'আপনারা জানেন, আমাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশে তদন্তের আওতায় রয়েছেন। আমরা দৃঢ়চিত্তে আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করছি। এসব তদন্ত আইনিভাবে দুর্বল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'
জিসান মির্জা
- সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী
- দুবাইয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে
সম্পত্তির বিবরণ
- বুর্জ খলিফা এলাকায় দ্য এড্রেস ফাউন্টেন ভিউজ রেসিডেন্সের ৫৫ তলায় জিসান মির্জার নামে তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
- বেনজীর আহমেদের মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে দুবাইয়ের বুর দুবাই আল ফাহিদি এলাকায় বানদুব প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এবং বানদুব টপ প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস নামে দুটি কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে। কোম্পানিগুলো ২০২০ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অভিযোগ
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলা করেছে। তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ নিয়ে পৃথক তদন্ত চলছে।
মন্তব্য
বেনজীর আহমেদ বর্তমানে দেশের বাইরে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আমাদের ফোন কল ও ইমেইলের জবাব দেননি।
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত
- পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান
- দুবাইয়ে তার দুটি সম্পত্তির মোট মূল্য অন্তত ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা
সম্পত্তির বিবরণ
১. দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার কাছাকাছি এলাকায় দ্য সিগনেচারের ৫০ তলা ভবনের ২৪ তলায় তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
২. দামাক হিলসের শান্ত আবাসিক এলাকায় সরাফাতের নামে পাঁচ বেডরুমের ভিলাও রয়েছে।
তদন্ত
দুদক তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার থেকে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং একটি ব্যাংক দখলের অভিযোগ তদন্ত করছে। সিআইডি তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার সব ধরনের সিকিউরিটির লেনদেন ও হস্তান্তর স্থগিত করেছে। বিএসইসি তার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি স্ট্রাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সব কার্যক্রম তদন্ত করবে।
মন্তব্য
সরাফাত আমাদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি। লিখিত বিবৃতিতে বলেন, 'আমরা বর্তমানে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না, কেননা আমরা কোনো চলমান তদন্তে হস্তক্ষেপ করত<