পোশাক শিল্পে রফতানির ক্রয়াদেশ বাড়ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:০৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:০৩ এএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নানা প্রতিক‚লতার পর দেশে তৈরি পোশাকের ব্যবসা ফিরছে। ক্রেতারা আবার বাংলাদেশি পোশাকের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছেন। আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ভালো ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। তবে রফতানি আরও বাড়াতে এ খাতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চান পোশাক শিল্পের মালিকরা।
জুলাই-আগস্ট মাসে উৎপাদন খাতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কাটিয়ে দেশের পণ্য রফতানি বাড়তে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, ক্রয়াদেশ নিয়ে এখন কোনো সমস্যা নেই। ফলে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের তৈরি পোশাক রফতানি শুরু হলে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই কারখানার ক্রয়াদেশ দেশের মধ্যে অন্য কারখানাগুলো পেয়েছে। তাছাড়া চীন থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশের একটি অংশ পাচ্ছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো। তবে বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ও কারখানার নিরাপত্তা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির সদস্য কারখানাগুলোর পক্ষে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রাপ্যতা (ইউডি) নেয়া ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলারের ইউডি নেয়া হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু করা হয়। তার মধ্যে গত দুই মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) ৪৯৭ কোটি ডলারের ইউডি ইস্যু হয়েছে।
চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ১ হাজার ৬১২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার মানে, চলতি অর্থবছর তৈরি পোশাকের রফতানি বেড়েছে ১২ শতাংশ।
ধামরাইয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ বলেন, প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। আশা করছি, আগামী মৌসুমগুলোতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক রফতানিতে ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা পরিপূর্ণ হওয়ায় অনেক ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বর্তমানে বড় সমস্যা তৈরি পোশাকের দাম। দু-একটি ব্র্যান্ড ছাড়া সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে কম দাম অফার করছে। একদিকে উৎপাদনের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে দাম কমছে। ফলে সংখ্যায় ক্রয়াদেশ বাড়লে রফতানি আয় সেই হারে বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, একের পর এক আন্দোলনে বিদেশি ক্রেতারা উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরানো শুরু করেছে বলে জানালেন স্প্যারো গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কারখানায় পূর্ণসক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের আমাদের শিল্পের বেশ কিছু বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব কারখানার ক্রয়াদেশও আমাদের কারখানায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হয়েছে। এরপরও পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না। একটি গোষ্ঠী পোশাক শিল্পকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা আস্থা ফিরে পাবেন না। বিদেশি ক্রেতারাও বিকল্প উৎসের দিকে যাবে।