চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ, ভারত উদ্বিগ্ন
সোহেল সামি, দিনকাল
প্রকাশ: ০১:২৩ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:৩২ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পাকিস্তানের করাচি থেকে গত সপ্তাহে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নোঙর করে। যা ছিলো ১৯৭১ সালের পর প্রথম কোনো পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের বাংলাদেশে নোঙর করার ঘটনা। ঘটনাটি দুই দেশের সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার বার্তা দেয়।
অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারত। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া' এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে লেখা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে (সেভেন সিস্টার্স) সম্ভাব্য অস্থিরতা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে এই রাজ্যগুলো অবস্থিত।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যক্রম বাড়াতে আগ্রহী। আর তাদের আশা সরাসরি সামুদ্রিক পথের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম ছিলো।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরো লিখেছে, চট্টগ্রাম ও মংলা বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্দর। গত পাঁচ দশকে এখানে পাকিস্তান জায়গা পায়নি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে।
‘কিন্তু এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আপনি বলতে পারবেন না, পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জিনিস (অস্ত্র) আসবে না। আর সেগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে যাবে না।’
ভরতীয় সংবাদমাধ্যমটি ২০০৪ সালের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে দাবি করেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ট্রলারে করে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফার জন্য ১ হাজার ৫০০ চাইনিজ অস্ত্র পাঠিয়েছিলো। কিন্তু সেগুলোর উলফার হাতে যাওয়ার আগেই জব্দ করা হয়। কিন্তু মাধ্যমটি এটি উল্লেখ করেনি, অস্রগুলো তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারই জব্দ করেছিলো।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, ভারত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের এ দুটি বন্দর থেকে চীনকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো।
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরো লিখছে, গত বছর মংলা পোর্টের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে চীনের ওপর একটি কৌশলগত জয় পেয়েছিলো ভারত। কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে গেলো। বিষয়টি অবশ্যই এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। কারণ মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছে।
অন্যদিকে ভারত এমন উদ্বিগ্ন হলেও বাংলাদেশে সরাসরি জাহাজ আসার বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে পাকিস্তান। কারণ এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান জটিল সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার যেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি বাণিজ্যিক ভাবে দুই দেশের সম্পর্ক আরো দৃড় হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট'।
স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে 'টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া' প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তাতে বাংলাদেশের সরকারি কোনো সূত্রের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিবেদনটিকে একতর্ফা ও একটি স্বাধীন দেশের বৈদেশিক নীতিতে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে অনেকে।
দিনকাল/এসএস