বাকশালের উত্তরসুরিরা জিয়া-খালেদার অর্জিত অর্থনীতি ধ্বংস করেছে
আলী মামুদ, দিনকাল
প্রকাশ: ০৮:৩৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ২ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
লাখ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশে কায়েম করা হয়েছিল গণতন্ত্র বিনাসী বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ)। এই বাকশালের উত্তরসুরিরাই অর্ধ-শতক পর এই দেশে আবার জারি করেছিল ব্যাপক অন্যায় ও দুর্নীতির রাজত্ব। দুর্নীতির মহারানী বলেছিলেন ‘আমার কোনো বিকল্প’ নেই। ব্যাংক লুট-মানুষ হত্যা-বলপূর্বক গুম ইত্যাদি ঘটনার অবসান ঘটলো জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মহা গণঅভ্যুত্থানে। অর্জিত হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানি গণতন্ত্র বিরোধী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জনে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশ। অর্জিত হয় লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। কিন্তু কাক্সিক্ষত স্বদেশ গড়ে ওঠেনি। বরং আবির্ভূত হয়েছে গণতন্ত্র হত্যাকারী একদলীয় ব্যবস্থা, জিনিসটি (বাকশাল) এতোই খারাপ ছিল যে, এর রাজনৈতিক উত্তরসুরিরা পর্যন্তও চরম নিন্দিত ‘বাকশাল’ শব্দটি উচ্চারণ করেন না। বস্তুত ‘বাকশালী’ একটি ‘গালি’ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাকশাল আমলে অর্থনীতির নামে দেশে ঢালাও জাতীয়করণ চলেছিল। এতে রুটি-স্নো পাউডার থেকে শুরু করে তরল পানীয় কারখানাও জাতীয়করণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ত্যাগ করে যাওয়া পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত শিল্প কারখানার সঙ্গে সঙ্গে দেশি বাঙালিদের গড়ে তোলা কল-কারখানা-ব্যাংকও জাতীয়করণ করা হয়েছিল। বলা হয় ভারতীয় পরামর্শে করা হয়েছিল ঢালাও জাতীয়করণ। পরিণতিতে বাংলাদেশ ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়।
অবশ্য এসব কলকারখানা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্ত-অর্থনীতির যুগে খুলে দেয়া হয়। দেশি শিল্প উদ্যোক্তারা ডবিøউ রহমান জুট মিল, কাশেম টেক্সটাইল, মার্কেটাইল ব্যাংক ইত্যাদি ফিরে পান তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া শিল্প কারখানা (কোহিনূর, নাবিস্কো, হক, বেঙ্গল, অলিম্পিক) এখন ভালো পরিচালনায় ভালোভাবেই চলছে। এদের পণ্যমানও ভালো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হলো জিয়া-খালেদা অর্থনীতির যুগে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছিল, লুটেরা অর্থনীতির শেখ হাসিনার যুগে সেই অর্থনীতি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ‘জিয়া সরকারের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য হলো : ব্যাক টু ব্যাক নীতি চালু করে গার্মেন্ট শিল্পের গোড়াপত্তন, ম্যান পাওয়ার এক্সপোর্ট, ইপিজেড স্থাপন ইত্যাদি। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের অন্যতম অবদান হলো ১৯৯১ সালের পার্লামেন্টে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ভ্যাট আইন পেশ করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে। রাজপথের কর্মসূচিও পালন করে। কিন্তু আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে রাজস্ব আয় করে তার অর্ধেকেরও বেশি ভ্যাট পদ্ধতিতে আহরিত। প্রতি বছর ভ্যাট দিবসও পালন করেছে হাসিনা সরকার। আজ বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দেশের আমদানি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
যাহোক, বর্তমান সরকার শেখ হাসিনা সরকারের লুটপাটের ওপর একটি শে^তপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে, তা দেখার জন্য জনগণ এখন উন্মুখ।
বাংলাদেশের অর্ধ শতকের অর্থনীতির ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাস চমকপ্রদ। তবে সাফল্য যে নেই তাও নয়। সাফল্যটি হলো কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির। বাংলাদেশের শ্রমজীবীরা মাঠে ঘাটে দেশে বিদেশে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের শ্রমিকরা একদা বিদেশে চাকরি করতে গেলে তাদের ‘আদম’ বলা হতো। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজকে ‘দর্জিগিরি’ বলা হতো। এখন আর সে সব বলা হয় না। বাংলাদেশের সেনা-পুলিশরা বিদেশে শান্তি মিশনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন, তাদের বিদেশে যাওয়ার বিরুদ্ধেও কথা বলা হয়েছিল। এখন বলা হয় না-গর্ব করা হয়।
বিগত কালের ঘটনাবলি নিয়ে কথা হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ও বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী এলিনা খানের সঙ্গে।
আন্দোলনের বিজয় হয়েছে-শামসুজ্জামান দুদু : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থা থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন টিভি-টকারও বটে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী দীর্ঘ অর্ধশতকের প্রেক্ষাপট টেনে তিনি বলেন, মানুষ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক, সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ছিলেন। বিজয়ের পর চাকরিতে ফিরে যান। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তরকালে কি ঘটেছে তা আমরা দেখেছি। দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়। উদ্ভ‚ত অবস্থায় ‘একদল’ বা ‘বাকশাল’ চালু হয়, যা ক্ষণস্থায়ী হয়। পরে একদলের স্থলে বহুদল ফিরে আসে বাকশালের দ্বিতীয় সদস্য খোন্দকার মুশতাক আহমাদ প্রেসিডেন্ট হন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব সরকার মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলনের বিজয় হয়। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনের বিজয় হয়েছে। ৫২ বছর পর জনগণের বিজয়ের ইতিহাসকে মানুষ স্বাগত জানায়।
কৃষক-শ্রমিকরা বঞ্চনার শিকার-রাজেকুজ্জামান রতন : রাজেকুজ্জামান রতন বাসদ নেতা। তবে টিভি মিডিয়ার একজন নিয়মিত অংশ গ্রহণকারী। তিনি ছিলেন ৮ম বিসিএস। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হতে গিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি, মনও চায়নি। এজন্য তার আফসোস আছে বলে মনে হয় না। তবে দেশের অর্থনীতির ভালো খবর রাখেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে (শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসা) দেশের সরকারের পূঞ্জিভ‚ত ঋণ ছিল ২৫০০ কোটি টাকা। এখন তা ১৮ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এখন যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করছে তার মাথায় ১ লাখ টাকা ঋণ চেপে বসে।
লুটপাটে ব্যাংকারদের সায় ছিল-এলিনা খান : অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। বিগত ১৫ বছরের সরকারের চরম দুর্নীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের অধিকার রয়েছে তার ইচ্ছেমত কাজ করা, ব্যবসা করা ইত্যাদি। কিন্তু গত ১৫ বছরে মানুষের অধিকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যাংকে চলেছে যে লুটপাট তাতে কি ব্যাংকারদের সায় ছিল? প্রশ্ন করেন এলিনা খান।