ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহার, ভোক্তার লাভ কী?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ১৬ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৪ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার সয়াবিন ও পামতেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ওই দুই পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের এসআরও জারির কাজ চলছে। এসআরও জারির পর একজন ভোক্তা এক লিটার সয়াবিন তেল বা পামতেলে কত টাকা ছাড় পাচ্ছেন এ প্রশ্ন সবার। কিংবা আদৌ ছাড় পাবেন কিনা এ নিয়েও আছে সন্দেহ। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা। ৫ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা ও পামতেলের দাম লিটারে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা ছিল। এই দর যখন নির্ধারণ হয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ১৩৫০ মার্কিন ডলার। ১৪ মার্চ সেই তেল বিক্রি হয়েছে ১৯৫০ ডলারে। যদি আন্তর্জাতিক বাজারদর এমন থাকে, তাহলে ভ্যাট কমিয়েও ভোক্তাকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। কারণ এ আমদানি মূল্য ধরে নতুন দর নির্ধারণ করলে ভোজ্যতেলের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
গত ১০ মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, চিনি ও ছোলার ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভোজ্যতেলে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ মিলে মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম ২০ শতাংশ কমছে বলে ভোক্তারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু সোমবার (১৪ মার্চ) বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে।
এদিকে দেশের ভোজ্যতেল রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর কাছে আমদানির তথ্য চেয়েছে সরকার। কোম্পানিগুলো গত তিন মাসে কী পরিমাণ তেল আমদানি করেছে, পরিশোধন করেছে ও কতটুকু মজুত আছে— কাস্টমস পেপারসহ এ সবের তথ্য চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো কত পরিমাণ তেলের ডিও বা এসও দিয়েছে, কত পরিমাণের তেল সরবরাহ (ডেলিভারি) করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত কতটা মজুত আছে, এসব তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, অভিযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রিফাইনারি কোম্পানিগুলো। অনেক পাইকার অধিক মুনাফার আশায় সঠিক সরবরাহ দিচ্ছেন না। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট হচ্ছে। এদিকে মালিকদের সঙ্গে বসে সরকার সয়াবিন ও পামতেলের দর নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় এখন আর বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ সবখানেই। দোকানিরাও লাভের আশায় বোতলের তেল ড্রামে ঢালছেন। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের যারা একসঙ্গে এক লিটার কেনার সামর্থ রাখেন না তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনছেন ২৫০ মিলিলিটার বা তারচেয়ে কম। প্রকাশ্যেই ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে এই নৈরাজ্য। খুচরা দোকানিদের কথা হলো, এখন আর পাঁচ লিটার, তিন লিটার, বা দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্রেতা নেই। থাকলেও কম। তাদের জন্য সারি সারি বোতল সাজিয়ে রাখলে ব্যবসা চলবে না। এ ছাড়া বোতলজাত তেলে মুনাফাও কম। তাই খোলা তেল বিক্রি করছি।
কাওরানবাজারের পাইকার ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভোজ্যতেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেটা ভ্যাটসহ বেশি দামে কেনা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে শুনেছি, তবে এখনই তো ক্রেতারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ, আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য বাজারজাত করার পর দাম কমানো যাবে। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলসি করা পণ্য কবে নাগাদ ভ্যাট-ফ্রি আসছে তার ওপর নির্ভর করছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, পণ্যের দাম সহনীয় রাখার দায়িত্ব শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একার নয়। এ কাজে একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা কাজ করছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম অবশ্যই বিষয়টি তদারকি করবে।