সিন্ডিকেটের গুজবে হুমকিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৫ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসা স্থগিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও গুজব কখনোই পিছু ছাড়েনি। এই শ্রমবাজারটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই কৌতূহল একটু বেশি।
তার কারণ বাংলাদেশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আদর্শ কর্মস্থল মালয়েশিয়া। এখনো বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ বাংলাদেশী বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন।
এখানে শুধু শ্রম বিক্রি করা নয়, ব্যবসা, দোকানপাট, চাকরি, শিক্ষাগ্রহণ, শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ ‘মাই সেকেন্ড হোম’ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করা সহজলভ্য। তাই শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় কর্মী যেতে গত ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ যৌথভাবে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। এর পরে সম্প্রতি একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি ও তার সাথে আরো ২৫০ সাব এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এই খবরটি প্রকাশ করেছে। এরপরে শুধু বাংলাদেশেই নয় মালয়েশিয়ায় এটা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। তবে এই ২৫ এজেন্সির সত্যতা এখন পর্যন্ত কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় থেকে স্বীকার করা হয়নি।
শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের গুজবের জেরে এই শ্রমবাজারটি পুরোপুরি ওপেন হতে দীর্ঘায়িত হতে পারে, এমনকি স্থগিতের হুমকিতেও পড়তে পারে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী মিস্টার সারাভানানের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটির সুশীল সমাজ। বাংলাদেশের এই ২৫ এজেন্সির বিষয়ে তিনিও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী মো. ইমরান আহমেদ ‘২৫ ও ২৫০’ সিন্ডিকেটের কথা উড়িয়ে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কত টাকার খরচায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে এই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ যৌথভাবে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পর বলা যাবে আসলে কোন প্রক্রিয়া কর্মী মালয়েশিয়ায় যাবে। সমঝোতা স্মারক এমওইউ চুক্তিতে কোথায় বলা হয়নি নির্দিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাবে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বৈধ যেকোনো এজেন্সির মাধ্যমে অথবা মালয়েশিয়া যাদের পছন্দ হয় তাদের মাধ্যমে কর্মী নিবে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু এখনো সেই চূড়ান্ত বৈঠক হয়নি তাহলে সিন্ডিকেটের প্রশ্ন আসছে কেন? আর আপনারা এসব গুজবে কান দেন কেন?
বাংলাদেশের সাথে যে এমওইউ চুক্তি করা হয়েছে তা নিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার জাতীয় গণমাধ্যম ‘দ্য ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’তে মানবসম্পদমন্ত্রী মিস্টার সারাভানানের কড়া সমালোচনা করে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘এমওইউ নিয়ে সারাভানানের গোপনীয়তা দুঃখজনক এবং নির্বোধ কর্ম’ এবং সেখানে কি আছে সেটা জনসমক্ষে উপস্থাপন করার দরকার বলে মন্তব্য করা হয়।
অর্থাৎ সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ২৫ এজেন্সি ও ২৫০ সাব এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করবে এই বিষয়টি যেন জনসমক্ষে পরিষ্কার করা হয়।
মালয়েশিয়ার তেনাগানীর (মানবাধিকার সংস্থা) যোসেফ পল বলেছেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক যদি কাজ আদায় করে তাহলে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সে ব্যাপারে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) কিছুই বলা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা কর্তৃক শ্রমিকদের জিম্মি করে জোর করে শ্রম আদায়ের ঘটনা আগেও ঘটেছে, তাই এই বিষয়ে নীতিমালা দরকার।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসায় কর্মী নিতে বিরোধিতা করছে কিছু স্থানীয় এনজিও এবং কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন। কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ইউসুফ আজমি কর্তৃপক্ষের কাছে এক স্মারকলিপি জমা দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে করোনাকালে লাখ লাখ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছে, তাই বিদেশ থেকে কর্মী আমদানি করা হলে মালয়েশিয়ানরা কাজ পাবে না।
তবে এসব আলোচনা-সমালোচনার জবাবে মানবসম্পদমন্ত্রী মিস্টার সারাভানান বলেন, ‘আমি সরকারে উপমন্ত্রী হিসেবে ১৫ বছর ধরে কাজ করেছি। আমাদের দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করেই এমওইউ চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু মানুষ এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা হলেন অতি উৎসাহী। তাদের জানাতে চাই, ২০১৮ সালে পাকাতান হারাপানের শাসিত সরকারের সময় বাংলাদেশের থেকে কলিং ভিসায় কর্মী নেয়া স্থগিত করা হয়েছিল, আমরা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগে সম্মত হয়েছি মাত্র। এর মধ্যে কি আছে? এমন বিশেষ কিছু নেই, আমরা আরো সমীক্ষা করে মালয়েশিয়ায় কর্মীর চাহিদাপত্র তৈরির জন্য অনলাইন আবেদন চালু করা হয়েছে, সেই চাহিদা অনুসারে কর্মী নিয়োগ করা হবে। আর আপনারা সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এগুলো কোথায় পেলেন? কারণ সমঝোতা স্মারকপত্র এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।’