জামানতবিহীন ঋণ দিতে ৩১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ২০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ছোট উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে ৩১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর লক্ষ্যেই সহজ শর্তে প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের তহবিল জোগান দেয়ার জন্য এ নির্দেশনা দেয়া হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। ক্রেডিট গ্যারান্টির আওতায় ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৭টি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, পূবালী, ইউসিবি, ইস্টার্ন, মার্কেন্টাইল, এক্সিম, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, যমুনা, ওয়ান, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল, সাউথইস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, ট্রাস্ট, এনআরবি, প্রিমিয়ার, ইউনিয়ন, ডাচ্ বাংলা, ইসলামী, শাহজালাল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ও অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিলের জোগান দিতে প্রণোদনা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় সবশ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণ পেলেও ছোট উদ্যোক্তারা জামানতের অভাবে ঋণ পাচ্ছিল না। এতে তহবিলের অভাবে ছোট উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিচ্ছিল। এমনি পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে ২০২০ সালের ২৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম গঠন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অর্থ থেকে এ তহবিল গঠন করা হয়। কোনো কারণে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে স্কিমের তহবিল থেকে ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো জামানত নেয়া যাবে না। ঋণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন মারফত কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে ক্রেডিট গ্যারান্টির আওতায় গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে কোনো কোনো ব্যাংক অনিহা প্রকাশ করছে। আবার কেউ কেউ ঋণ দিতে অসহযোগিতা করছে। এমনই অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সাথে গ্রাহকদের যোগাযোগ করতে প্রতিটি ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বরসহ একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এ তালিকাটি ছোট ব্যবসায়িদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশেনে পাঠানো হয়েছে। এর আগে প্রণোদনা কর্মসূচি থেকে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে নিবন্ধিত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে, ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণধারী ব্যাংকগুলোকে বেশি হারে এবং কম খেলাপিঋণধারী ব্যাংকগুলোকে কম হারে জামানত দিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনা শুরুর পর গত বছরের এপ্রিলে প্রথম এ খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা দেয়া হয়। গত ৩০ জুন এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর প্রায় ৮৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় এ খাতের জন্য আরো ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আওতায় এখন ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো মাঝারি উদ্যোক্তাদেরই এ তহবিল থেকে ঋণ দিতো। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের দিত না। এদেরকে ঋণ দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে। ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে এ তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে। এ গ্যারান্টির বিপরীতে ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ পাচ্ছেন।