এবারও হচ্ছে না আয়কর মেলা, বিকল্প আয়োজনে যা থাকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৭ এএম, ৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪৯ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
গতবছরের মতো এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে করদাতাদের সুবিধায় সব কর অঞ্চলে নভেম্বর মাসজুড়ে আয়কর মেলার সুবিধা দেয়া হবে।
জানা গেছে, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। অনেকেই আয়কর মেলায় রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহী থাকেন। কারণ, মেলায় রিটার্ন জমা দিতে সময় লাগে কম, ভোগান্তিও কম হয়। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে মেলা করেনি এনবিআর। এখন করোনার প্রকোপ কমেছে। এ অবস্থায় করদাতাদের অনেকেই ধারণা করেছিলেন এ বছর আয়কর মেলা হবে। কিন্তু সম্প্রতি সেগুনবাগিচায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবারও আয়কর মেলা হচ্ছে না। তবে মেলা না হলেও ১-৩০ নভেম্বর কর সংস্কৃতির বিকাশ, করদাতাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর সেবা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে অফিস চলাকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন গ্রহণ করা হবে। করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর কর মেলার আয়োজন করে আসছে এনবিআর। বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের মেলায় গিয়ে করদাতারা যেতেন আয়কর জমা দিতে। আয়কর মেলাটি করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এবার তা না হওয়ায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন বলেন, মেলা হলে জনসমাগম হবেই। এতে করোনা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কর অঞ্চলে রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় রিটার্ন জমা দেয়া যায় মাত্র তিন-চারদিন। কিন্তু আমরা ৩০ দিন মেলার সকল সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। আয়কর মেলার মতোই কর অঞ্চলের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। কর অঞ্চল খুঁজে পাওয়া নিয়ে করদাতাদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা একবার রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তাদের জন্য কর অফিস খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। এ ছাড়া এনবিআরের ওয়েবসাইটে কর অঞ্চলের ঠিকানা, সংশ্লিষ্ট কমিশনারের নাম ও মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। উল্লেখ্য, করদাতারা যাতে কর অঞ্চলেই মেলার পরিবেশ পান, কর অঞ্চলগুলোকে সে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। একাধিক কর অঞ্চলের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কর অঞ্চলে উৎসবের আমেজ তৈরি করেছেন।
এদিকে করদাতাদের সেবা নিশ্চিত করতে এনবিআর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ১০ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে ১৭টি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি ও মনিটরিং কমিটিসহ বেশ কয়েকটি কমিটি করা হয়েছে। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা, বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ দেশজুড়ে কর মেলার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশেই করদাতাদের জন্য এ ধরনের মেলা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মেলায় প্রায় ২৫ লাখের মতো রিটার্ন জমা পড়েছিল।
কর অঞ্চলকে এনবিআরের নির্দেশনা : কর কমিশনার অঞ্চলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে ১-৩০ নভেম্বর রিটার্ন গ্রহণের জন্য করদাতাদের সেবা দিতে হবে।
প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান, কার পার্কিং এরিয়ায় রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। রিটার্ন দাখিলকারীদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিস্বীকারপত্রের সঙ্গে উপহার প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সব কর কমিশনার সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিটি কর অঞ্চলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তথ্যসহ হালনাগাদ করতে হবে। ওই ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ করতে হবে। কর অঞ্চলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে। কর অঞ্চল ৪-এর ব্যবস্থাপনায় সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের জন্য অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহ কর তথ্যসেবা প্রদান করা হবে। সব কর অঞ্চলের কমিশনাররা তাদের নিজ নিজ কর অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেবেন। ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস ২০২১ উদযাপন করা হবে।