দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৯ এএম, ১১ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫৯ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম বেকায়দায় নিম্নবিত্তের মানুষ। মধ্যবয়সী রাজিয়া সুলতানার সংসারে সব মিলিয়ে ২২ হাজার টাকা আসে প্রতি মাসে। এ টাকায় ৩ সন্তানের দেখাশোনাসহ খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি পয়সাই হিসেব করে খরচ করতে হয় তাকে। রাজধানীর পূর্ব কাজীপাড়ায় খোলা বাজারের ট্রাক থেকে চাল ও আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। ৫ কেজি চাল এবং ৩ কেজি আটা কিনতে প্রচন্ড রোদে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কারণ সেখান থেকে কিনলে ১৩১ টাকা বাঁচবে তার।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, এটা আমার জন্য অপমানজনক। কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প নেই আমার। খাবারের দাম বাড়ার পর থেকে তার পরিবার খাওয়া অর্ধেক করে দিয়েছে। মাংস খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। খাদ্য অধিদফতর পরিচালিত ওএমএস ট্রাকে ১ কেজি চালের দাম ৩০ টাকা, যা খুচরা বাজারের চেয়ে ২২ টাকা কম। পাশাপাশি, ট্রাকে ১ কেজি ময়দার দাম ২৩ টাকা। বাজারে ময়দার কেজি ৩০ টাকা। লাইনে সুলতানার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার গৃহকর্মী সুমনা বেগম। তার পরিবারের অবস্থা আরও শোচনীয়। বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে এবং ছেলে ও শাশুড়ির চিকিৎসার পর তার ও তার দিনমজুর স্বামীর হাতে খাবারের জন্য খুব অল্প টাকাই থাকে।
সুমনা বলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত’। সুলতানা ও সুমনার মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ খাবারের বাড়তি দামের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছেন আমিষ গ্রহণ কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। এবার বছর জুড়েই খাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ মাস আগের তুলনায় ৮ বেসিস পয়েন্ট (ভিত্তিমূল্য) বেড়ে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়ায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১, শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ টাকা। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুমন জানান, মাছের দামও কেজিতে গড়ে ২০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ১ সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। রান্নার এই অপরিহার্য উপাদানটি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এ ছাড়া, গত ১ সপ্তাহে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে টমেটোর দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হয়। আর এখন টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। গাজরের দাম ১ সপ্তাহে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলেন, সরবরাহ স্বল্পতার কারণে সবজির দাম সাধারণত প্রতি অক্টোবরেই বেশি থাকে। তেল, চিনি, ময়দাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে অনেক বেশি বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ায়।