ডিজেল-সারসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দুশ্চিন্তা কাটছে না কৃষকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৭ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩১ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নওগাঁয় বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম। জেলার বিভিন্ন বাজারে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা। এতে চাষিরা আপাতভাবে কিছুরা স্বস্তি পেলেও ডিজেল-সারসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে তাদের দুশ্চিন্তা কাটছে না।
ধানচাষিরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সুযোগ বুঝে ধানের দাম কম-বেশি করেন। এতে শেষ পর্যন্ত ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় চাষিদেরই। এ অবস্থায় বাজার মনিটরিংয়ের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর নওগাঁয় ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুরে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এবং রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চকগৌরিতে ছিল হাটবার।
সরেজমিনে এ দুটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে ১১৪০ থেকে ১২৮০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেও আউশ ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। সেই ধানের দাম এখন মণপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। কৃষকদের গোলায় যখন ধানের পরিমাণ কমে গেছে, ঠিক তখনই বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাড়তি লাভ আদায় করে নিলেও কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পায় না। মহাদেবপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ১৫ মণ পারিজা ধান ১১৫০ টাকা দরে বিক্রি করলাম। অথচ কয়েক দিন আগেও এ ধান বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বামনছাতা গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম। সার-তেলে দামও বেড়েছে। ফলে আউশ ধান চাষাবাদে বিগত বছরের চেয়ে এবার খরচও বেড়ে গেছে। এছাড়া বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। সে তুলনায় আমরা ধানের দাম পাচ্ছি না। ধানের মণ অন্তত ১৪০০-১৫০০ টাকা হলে কৃষক কিছুটা রক্ষা পেতো।
ধান ব্যবসায়ী রশিদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ বলেন, সরস্বতীপুর হাটে কিছুদিন আগেও ১২-১৩ ট্রাক আউশ ধান বেচাকেনা হয়েছে এবং দামও কম ছিল। বর্তমানে তা কমে ১০ ট্রাকে নেমেছে। বাজারে প্রায় চার হাজার মণ ধান আমদানি হচ্ছে। গড়ে ১১০০ টাকা মণ হিসেবে ৪০-৪৪ লাখ টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। কৃষকের গোলায় ধান কমতে শুরু করায় বাজারে দাম বাড়ছে।
ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগেও পারিজা ধান বিক্রি হয়েছে ১০৫০ টাকা মণ দরে। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৩০-১১৫০ টাকায়। জিরাশাইল ধান বিক্রি হয়েছিল ১২০০-১২৩০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫০-১২৮০ টাকায়। এছাড়া ৭৬ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১২২০ টাকা মণ দরে। যা কিছু দিন আগেও ছিল ১১০০-১১৩০ টাকা মণ। ধানের আমদানি কম হওয়ায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ধানের দাম আরও বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা চাউল ও ভূষিমাল সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান টিপু বলেন, চালকল মালিকরা বাজার ধরে রাখতে ধান কিনছেন। এসব ধান থেকে চাল তৈরি করতে চালকল মালিকদের বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। তবে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। বলা চলে বাজারে ক্রেতা সংকট।
তিনি জানান, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএস এবং সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি চালু হওয়ায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।