সুতার অভাবে ৫০ ভাগ তাঁত বন্ধ!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৪ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশি তাঁত শিল্প রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রেয়াতী শুল্কে অবিলম্বে পলিয়েস্টার সুতা আমদানির পথ খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতী সমিতি। সমিতির সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন বলেছেন, আমরা মরে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের বাঁচান। আমাদের প্রায় ৫০ ভাগ তাঁতশিল্প এখন বন্ধ। সেখানে কর্মরত ৬০ লাখ শ্রমিক বেকার। আপনাদের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন, তাঁতী সমাজের এই বুকফাটা কান্না শুনে অবিলম্বে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
আজ রবিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশের সমগ্র তাঁতী সমাজের পক্ষ থেকে তিনি এই দাবি জানানো হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তাঁতি সমিতির সহসভাপতি মো, শাহজাহান, নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন, আলী হোসেন, মন্জু রানী প্রামাণিক, মো, আইয়ুব আলী প্রমুখ। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও নরসিংদী জেলা থেকে সেসব এলাকার তাঁতী সমিতির নেতারা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, শক্তিশালি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় সারা দেশে দেশীয় তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। বন্ধ হয়ে গেছে ৫০ ভাগ তাঁত। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের এই সিন্ডিকেট কৌশলে সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম এই সংকট সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৭৫ টাকা পাউন্ডের কটন সুতার দাম তিন থেকে চার গুন বাড়িয়ে দিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে তথাকথিত এই সিন্ডিকেট। ফলে ২৪ লাখ দেশি তাঁতের মধ্যে ১৫ লাখ তাঁতই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন ৬০ লাখ শ্রমিক।
তিনি বলেন, গত দুই বছরে এই খাত থেকে বিটিএমএর যোগসাজশে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। সারা দেশে এই তাঁত শিল্প বন্ধ হওয়ার পিছনে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের দুর্নীতি, অবহেলা, অনিয়মকে দায়ী করে তিনি বলেন, বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম সাহেবই বিটিএমএর সঙ্গে আঁতাত করে তাঁতী সমাজের এই সর্বনাশ করেছেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা কৌশলে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। বোর্ডের অধীনে সরকারি কেনাকাটাসহ এই শিল্প থেকে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এই সিন্ডিকেটকে। দেশীয় তাঁত বন্ধ রেখে পরোক্ষভাবে কটন মিলগুলোকে ব্যাপক বাণিজ্যের সুবিধা করে দেয়া হয়েছে। ফলে তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন পার করছেন তাঁতী পরিবারের অসহায় সদস্যরা।
জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি আরো বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে এই শিল্পটাই আজ ধ্বংসের পথে। তাঁতীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া শুল্কমুক্ত পলিয়েস্টার সুতা আমদানির নির্দেশ কৌশলে লঙ্ঘন করে টানা দুই বছর ধরে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। বোর্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও তাঁতী সমিতি কিংবা তাঁতী সমাজের কোনো প্রতিনিধি কোথাও রাখা হয়নি দুই বছর ধরে। তাঁতীদের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আবেদন ফরমে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক তাঁতী সমিতির সভাপতির সুপারিশের একটি নিয়ম থাকলেও তাঁত বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান তার একক সিদ্ধান্তে সেটি অন্যায়ভাবে উঠিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, তাঁতীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা না হলেও সুতা আমদানি সংক্রান্ত সুপারিশ কমিটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিটিএমএর সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অতপর কমিটির প্রথম বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাঁতীদের জন্য পলিয়েস্টার সুতা আমদানির লক্ষ্যে জারি করা এসআরও বাতিলের প্রস্তাব করেন এই বিটিএমএর চেয়ারম্যান। তার প্রস্তাবেই মূলত এখনো পর্যন্ত তাঁতীদের রেয়াতী শুল্কে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রেখেছে তাঁত বোর্ড। এছাড়াও তাঁতীদের প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।